বর্ষাপ্রভাত

ওগো, এমন সোনার মায়াখানি
কে যে গড়েছে!
মেঘ টুটে আজ প্রভাত-আলো
ফুটে পড়েছে।
বাতাস কাহার সোহাগ মাগে,
গাছে-পালায় চমক লাগে,
হৃদয় আমার বিভাস রাগে
কী গান ধরেছে!

আজ বিশ্বদেবীর দ্বারের কাছে
কোন্‌ সে ভিখারী
ভোরের বেলা দাঁড়িয়েছিল
দু হাত বিথারি-
আঁজল ভ’রে সোনা দিতে
ছাপিয়ে পড়ে চারি ভিতে,
লুটিয়ে গেল পৃথিবীতে,
এ কী নেহারি!

ওগো, পারিজাতের কুঞ্জবনে
স্বর্গপুরীতে
মৌমাছিরা লেগেছিল
মধু-চুরিতে।
আজ প্রভাতে একেবারে
ভেঙেছে চাক সুধার ভারে,
সোনার মধু লক্ষ ধারে
লাগে ঝুরিতে।

আজ সকাল হতেই খবর এল-
লক্ষ্মী একেলা
অরুণ-রাগে পাতবে আসন
প্রভাতবেলা।
শুনে দিগ্বিদিকে টুটে
আলোর পদ্ম উঠল ফুটে,
বিশ্বহৃদয়-মধুপ জুটে
করেছে মেলা।

ওকি সুরপুরীর পর্দাখানি
নীরবে খুলে
ইন্দ্রাণী আজ দাঁড়িয়ে আছেন
জানালা-মূলে!
কে জানে গো কী উল্লাসে
হেরেন ধরা মধুর হাসে,
আঁচলখানি নীলাকাশে
পড়েছে দুলে।

ওগো, কাহারে আজ জানাই আমি
কী আছে ভাষা-
আকাশ-পানে চেয়ে আমার
মিটেছে আশা।
হৃদয় আমার গেছে ভেসে
চাই-নে-কিছু’র স্বর্গ-শেষে,
ঘুচে গেছে এক নিমেষে
সকল পিপাসা।

বোলপুর
আষাঢ় ১৩১৩