বসন্ত

ওগো বসন্ত, হে ভুবনজয়ী,
বাজে বাণী তব মাভৈঃ মাভৈঃ,
বন্দীরা পেলো ছাড়া।
দিগন্ত হ’তে শুনি’ তব সুর
মাটি ভেদ করি’ উঠে অঙ্কুর,
কারাগারে দিল নাড়া।
জীবনের রণে নব অভিযানে
ছুটিতে হবে-যে নবীনেরা জানে,
দলে দলে আসে আমের মুকুল
বনে বনে দেয় সাড়া।।

কিশলয়-দল হ’লো চঞ্চল,
উতল প্রাণের কল-কোলাহল
শাখায় শাখায় উঠে।
মুক্তির গানে কাঁপে চারিধার,
কাণা দানবের মানা-দেওয়া দ্বার
আজ গেল সব টুটে।
মরু-যাত্রার পাথেয়-অমৃতে
পাত্র ভরিয়া আসে চারিভিতে
অগণিত ফুল, গুঞ্জন-গীতে
জাগে মৌমাছি-পাড়া।।

ওগো বসন্ত, হে ভুবনজয়ী,
দুর্গ কোথায়, অস্ত্র বা কই,
কেন সুকুমার বেশ?
মৃত্যুদমন শৌর্য আপন
কী মায়ামন্ত্রে করিলে গোপন,
তূর্ণ তব নিঃশেষ।
বর্ম্ম তোমার পল্লবদলে,
আগ্নেয় বাণ বনশাখাতলে
জ্বলিছে শ্যামল শীতল অনলে
সকল তেজের বাড়া।।

জড় দৈত্যের সাথে অনিবার
চির সংগ্রাম ঘোষণা তোমার
লিখিছ ধূলির পটে,
মনোহর রঙে লিপি ভূমিতলে
যুদ্ধের বাণী বিস্তারি’ চলে
সিন্ধুর তটে তটে।
হে অজেয়, তব রণভূমি ‘পরে
সুন্দর তা’র উৎসব করে,
দক্ষিণ বায়ু মর্ম্মর স্বরে
বাজায় কাড়া নাকাড়া।।

দোল পূর্ণিমা, ১৩৩৪