চাবি

বিধাতা যেদিন মোর মন
করিলা সৃজন
বহু কক্ষে ভাগ করা হর্ম্ম্যের মতন
শুধু তা’র বাহিরের ঘরে
প্রস্তুত রহিল সজ্জা নানা-মতো অতিথির তরে;
নীরব নির্জ্জন অন্তঃপুরে
তালা তা’র বন্ধ করি’ চাবিখানি ফেলি’ দিলা দূরে।
মাঝে মাঝে পান্থ এসে দাঁড়ায়েছে দ্বারে,
বলিয়াছে, “খুলে দাও”। উপায় জানিনা খুলিবারে।
বাহিরে আকাশ তাই ধূলায় আকুল করে হাওয়া;
সেখানেই যত খেলা, যত মেলা, যত আসা-যাওয়া।

অন্তরের জনহীন পথে
হিমে-ভেজা ঘাসে ঘাসে শেফালিকা লুটায় শরতে।
আষাঢ়ের আর্দ্র বায়ু ভরে
কদম্ব কেশরে
চিহ্ন তা’র পড়ে ঢাকা।
চৈত্র সে বিচিত্র বর্ণে কুসুমের আলিম্পনে আঁকা।
সেথায় লাজুক পাখী ছায়া-ঘন শাখে,
মধ্যাহ্নে করুণ কণ্ঠে উদাসীন প্রেয়সীরে ডাকে।
সন্ধ্যা তারা দিগন্তের কোণে
শিরীষ পাতার ফাঁকে কান পেতে শোনে
যেন কার পদ-ধ্বনি দক্ষিণ বাতাসে।
ঝরাপাতা-বিছানো সে ঘাসে
বাঁশরী বাজাই আমি কুসুম-সুগন্ধি অবকাশে।

দূরে চেয়ে থাকি একা
মনে করি যদি কভু পাই তা’র দেখা
যে পথিক একদিন অজানা সমুদ্র উপকূলে
কুড়ায়ে পেয়েছে চাবি; বক্ষে নিয়ে তুলে
শুনিতে পেয়েছে যেন অনাদি কালের কোন্ বাণী;
সেই হ’তে ফিরিতেছে বিরাম না জানি’।
অবশেষে
মৌমাছির পরিচিত এ নিভৃত পথ-প্রান্তে এসে
যাত্রা তা’র হবে অবসান;
খুলিবে সে গুপ্ত দ্বার কেহ যার পায়নি সন্ধান।।

বুয়েনোস্ এয়ারিস্,
২৬ নভেম্বর, ১৯২৪।