চাঞ্চল্য

নিশ্বাস রুধে দু চক্ষু মুদে
তাপসের মতো যেন
স্তব্ধ ছিলি যে ওরে বনভূমি,
চঞ্চল হলি কেন?
হঠাৎ কেন রে দুলে ওঠে শাখা-
যাবে না ধরায় আর ধরে রাখা,
ঝট্‌পট্‌ করে হানে যেন পাখা
খাঁচায় বনের পাখি।
ওরে আমলকী, ওরে কদম্ব,
কে তোদের গেল ডাকি!

‘ঐ যে ঈশানে উড়েছে নিশান,
বেজেছে বিষাণ বেগে-
আমার বরষা কালো বরষা যে
ছুটে আসে কালো মেঘে।’

ওরে নীলজল, অতল অটল
ভরা ছিলি কূলে কূলে,
হঠাৎ এমন শিহরি শিহরি
উঠিলি কেন রে দুলে?
তালতরুছায়া করে টলমল,
কেন কলকল, কেন ছলছল,
কী কথা বলিতে হলি চঞ্চল,
ফুটিতে চাহে না বাক্‌-
কাঁদিয়া হাসিয়া সাড়া দিতে চাস,
কার শুনেছিস ডাক!

‘ঐ-যে আকাশে পুবের বাতাসে
উতলা উঠেছে জেগে-
আজি মোর বর মোর কালো ঝড়
ছুটে আসে কালো মেঘে।’

পরান আমার রুধিয়া দুয়ার
আপনার গৃহ-মাঝে
ছিলি এতদিন বিশ্রামহীন
কী জানি কত কী কাজে!

আজিকে হঠাৎ কী হল রে তোর-
ভেঙে যেতে চায় বুকের পাঁজর,
অকারণে বহে নয়নের লোর,
কোথা যেতে চাস ছুটে?
কে রে সে পাগল ভাঙিল আগল,
কে দিল দুয়ার টুটে!

‘জানি না তো আমি কোথা হতে নামি
কী ঝড়ে আঘাত লেগে
জীবন ভরিয়া মরণ হরিয়া
কে আসিছে কালো মেঘে।’

বোলপুর
১৩ আষাঢ় [১৩১৩]