ছায়াছবি

একটি দিন পড়িছে মনে মোর।
উষার নিল মুকুট কাড়ি
শ্রাবণ ঘনঘোর;
বাদলবেলা বাজায়ে দিল তূরী,
প্রহরগুলি ঢাকিয়া মুখ
করিল আলো চুরি।
সকাল হতে অবিশ্রামে
ধারাপতনশব্দ নামে,
পরদা দিল টানি,
সংসারের নানা ধ্বনিরে
করিল একখানি।

প্রবল বরিষনে
পাংশু হল দিকের মুখ,
আকাশ যেন নিরুৎসুক,
নদীপারের নীলিমা ছায়
পাণ্ডু আবরণে।
কর্মদিন হারালো সীমা,
হারালো পরিমাণ,
বিনা কারণে ব্যথিত হিয়া
উঠিল গাহি গুঞ্জরিয়া
বিদ্যাপতি-রচিত সেই
ভরা-বাদর গান।

ছিলাম এই কুলায়ে বসি
আপন মন-গড়া,
হঠাৎ মনে পড়িল তবে
এখনি বুঝি সময় হবে,
ছাত্রীটিরে দিতে হবে যে পড়া।
থামায়ে গান চাহিনু পশ্চাতে;
ভীরু সে মেয়ে কখন এসে
নীরব পায়ে দুয়ার ঘেঁষে
দাঁড়ায়ে আছে খাতা ও বহি হাতে।

করিনু পাঠ শুরু।
কপোল তার ঈষৎ রাঙা,
গলাটি আজ কেমন ভাঙা,
বক্ষ বুঝি করিছে দুরু দুরু।
কেবলি যায় ভুলে,
অন্যমনে রয়েছে যেন
বইয়ের পাতা খুলে।
কহিনু তারে, আজকে পড়া থাক।
সে শুধু মুখে তুলিয়া আঁখি
চাহিল নির্বাক্।

তুচ্ছ এই ঘটনাটুকু,
ভাবি নি ফিরে তারে।
গিয়েছে তার ছায়ামূরতি
কালের খেয়াপারে।
স্তব্ধ আজি বাদলবেলা,
নদীতে নাহি ঢেউ-
অলসমনে বসিয়া আছি
ঘরেতে নেই কেউ।
হঠাৎ দেখি চিত্রপটে চেয়ে,
সেই-যে ভীরু মেয়ে
মনের কোণে কখন গেছে আঁকি
অবর্ষিত অশ্রুভরা
ডাগর দুটি আঁখি।

চন্দননগর
৪ আষাঢ়, ১৩৪২