ছুটির দিনে

ওই দেখো মা, আকাশ ছেয়ে
মিলিয়ে এল আলো;
আজকে আমার ছুটোছুটি
লাগল না আর ভালো।
ঘণ্টা বেজে গেল কখন্
অনেক হল বেলা,
তোমায় মনে পড়ে গেল,
ফেলে এলেম খেলা।

আজকে আমার ছুটি, আমার
শনিবারের ছুটি।
কাজ যা আছে সব রেখে আয়
মা তোর পায়ে লুটি।
দ্বারের কাছে এইখানে বোস্
এই হেথা চোকাঠ;
বল্ আমারে কোথায় আছে
তেপান্তরের মাঠ।

ওই দেখো মা, বর্ষা এল
ঘনঘটায় ঘিরে
বিজুলি ধায় এঁকে বেঁকে
আকাশ চিরে চিরে।
দেব্তা যখন ডেকে ওঠে
থর্থরিয়ে কেঁপে
ভয় করতেই ভালোবাসি
তোমায় বুকে চেপে।
ঝুপ্ঝুপিয়ে বৃষ্টি যখন
বাঁশের বনে পড়ে
কথা শুনতে ভালোবাসি
ব’সে কোণের ঘরে।
ওই দেখো মা, জান্লা দিয়ে
আসে জলের ছাঁট,
বল্ গো আমায় কোথায় আছে
তেপান্তরের মাঠ।

কোন্ সাগরের তীরে মা গো,
কোন্ পাহাড়ের পারে,
কোন্ রাজাদের দেশে মা গো,
কোন্ নদীটির ধারে।
কোনোখানে আল বাঁধা তার
নাই ডাইনে বাঁয়ে?
পথ দিয়ে তার সন্ধেবেলায়
পৌঁছে না কেউ গাঁয়ে?
সারা দিন কি ধূ ধূ করে
শুক্নো ঘাসের জমি?
একটি গাছে থাকে শুধু
ব্যাঙ্গমা-বেঙ্গমী?
সেখান দিয়ে কাঠকুড়ুনি
যায় না নিয়ে কাঠ?
বল্ গো আমায় কোথায় আছে
তেপান্তরের মাঠ।

এমনিতরো মেঘ করেছে
সারা আকাশ ব্যেপে,
রাজপুত্তুর যাচ্ছে মাঠে
এক্লা ঘোড়ায় চেপে।
গজমোতির মালাটি তার
বুকের ‘পরে নাচে,
রাজকন্যা কোথায় আছে
খোঁজ পেলে কার কাছে।
মেঘে যখন ঝিলিক মারে
আকাশের এক কোণে,
দুয়োরানী-মায়ের কথা
পড়ে না তার মনে?
দুখিনা মা গোয়াল ঘরে
দিচ্ছে এখন ঝাঁট্,
রাজপুত্তুর চলে যে কোন্
তেপান্তরের মাঠ।

ওই দেখো মা, গাঁয়ের পথে
লোক নাইকো মোটে,
রাখাল-ছেলে সকাল ক’রে
ফিরেছে আজ গোঠে।
আজকে দেখো রাত হয়েছে
দিস না যেতে যেতে,
কৃষাণেরা বসে আছে
দাওয়ায় মাদুর পেতে।
আজকে আমি নুকিয়েছি মা,
পুঁথি-পত্তর যত-
পড়ার কথা আজ বোলো না।
যখন বাবার মতো।
বড়ো হব, তখন আমি
পড়ব প্রথম পাঠ,-
আজ বলো মা, কোথায় আছে
তেপান্তরের মাঠ।