চলন্ত কলিকাতা

ইঁটের টোপর মাথায় পরা
শহর কলিকাতা
অটল হয়ে ব’সে আছে,
ইঁটের আসন পাতা।
ফাল্গুনে বয় বসন্তবায়,
না দেয় তারে নাড়া।
বৈশাখেতে ঝড়ের দিনে
ভিত রহে তার খাড়া।
শীতের হাওয়ায় থামগুলোতে
একটু না দেয় কাঁপন।
শীত বসন্তে সমান ভাবে
করে ঋতুযাপন।

অনেক দিনের কথা হ’ল
স্বপ্নে দেখেছিনু
হঠাৎ যেন চেঁচিয়ে উঠে
বললে আমায় বিন্দু
‘চেয়ে দেখো’, ছুটে দেখি
চৌকিখানা ছেড়ে-
কোলকাতাটা চ’লে বেড়ায়
ইটের শরীর নেড়ে।
উঁচু ছাদে নিচু ছাদে।
পাঁচিল-দেওয়া ছাদে
আকাশ যেন সওয়ার হ’য়ে
চড়েছে তার কাঁধে।
রাস্তা গলি যাচ্ছে চলি
অজগরের দল,
ট্র্যাম-গাড়ি তার পিঠে চেপে
করছে টলোমল।
দোকান বাজার ওঠে নামে
যেন ঝড়ের তরী,
চউরঙ্গীর মাঠখানা ওই।
যাচ্ছে সরি সরি।
মনুমেন্টে লেগেছে দোল,
উলটিয়ে বা ফেলে-
খ্যাপা হাতির শুঁড়ের মতো
ডাইনে বাঁয়ে হেলে।

ইস্কুলেতে ছেলেরা সব
করতেছে হৈ হৈ,
অঙ্কের বই নৃত্য করে
ব্যাকরণের বই।
মেঝের ‘পরে গড়িয়ে বেড়ায়
ইংরেজি বইখানা,
ম্যাপগুলো সব পাখির মতো
ঝাপট মারে ডানা।
ঘণ্টাখানা দুলে দুলে
ঢঙ্ ঢঙা ঢঙ্ বাজে-
দিন চ’লে যায়, কিছুতে সে
থামতে পারে না যে।
রান্নাঘরে কেঁদে বলে
রান্নাঘরের ঝি,
‘লাউ কুমড়ো দৌড়ে বেড়ায়,
আমি করব কী!’

হাজার হাজার মানুষ চেঁচায়
‘আরে, থামো থামো-
কোথা যেতে কোথায় যাবে,
কেমন এ পাগলামো!’
‘আরে আরে, চলল কোথায়’
হাব্ড়ার ব্রিজ বলে,
‘একটুকু আর নড়লে আমি
পড়ব খ’সে জলে।’
বড়োবাজার মেছোবাজার
চিনেবাজার থেকে-

‘স্থির হয়ে রও’ ‘স্থির হয়ে রও’
বলে সবাই হেঁকে।
আমি ভাবছি যাক-না কেন,
ভাব্না কিছুই নাই-
কোলকাতা নয় দিল্লি যাবে
কিম্বা সে বোম্বাই।

হঠাৎ কিসের আওয়াজ হ’ল
তন্দ্রা ভেঙে যায়-
তাকিয়ে দেখি কোলকাতা সেই
আছে কোলকাতায়।