দান

ভেবেছিলাম চেয়ে নেব-
চাই নি সাহস করে
সন্ধেবেলায় যে মালাটি
গলায় ছিলে প’রে-
আমি চাই নি সাহস করে।
ভেবেছিলাম সকাল হলে
যখন পারে যাবে চলে
ছিন্ন মালা শয্যাতলে
রইবে বুঝি পড়ে।
তাই আমি কাঙালের মতো
এসেছিলেম ভোরে-
তবু চাই নি সাহস করে।
এ তো মালা নয় গো, এ যে
তোমার তরবারি।
জ্বলে ওঠে আগুন যেন,
বজ্র-হেন ভারী-
এ যে তোমার তরবারি।
তরুণ আলো জানলা বেয়ে
পড়ল তোমার শয়ন ছেয়ে,
ভোরের পাখি শুধায় গেয়ে
‘কী পেলি তুই নারী?’
নয় এ মালা, নয় এ থালা,
গন্ধজলের ঝারি-
এ যে ভীষণ তরবারি।

তাই তো আমি ভাবি বসে
এ কী তোমার দান!
কোথায় এরে লুকিয়ে রাখি
নাই যে হেন স্থান।
ওগো, এ কী তোমার দান!
শক্তিহীনা মরি লাজে,
এ ভূষণ কি আমায় সাজে!
রাখতে গেলে বুকের মাঝে
ব্যথা যে পায় প্রাণ।
তবু আমি বইব বুকে
এই বেদনার মান-
নিয়ে তোমারি এই দান।

আজকে হতে জগৎ-মাঝে
ছাড়ব আমি ভয়,
আজ হতে মোর সকল কাজে
তোমার হবে জয়-
আমি ছাড়ব সকল ভয়।
মরণকে মোর দোসর ক’রে
রেখে গেছ আমার ঘরে,
আমি তারে বরণ ক’রে
রাখব পরানময়।
তোমার তরবারি আমার
করবে বাঁধন ক্ষয়।
আমিছাড়ব সকল ভয়।

তোমার লাগি অঙ্গ ভরি
করব না আর সাজ।
নাইবা তুমি ফিরে এলে
ওগো হৃদয়রাজ।
আমি করব না আর সাজ।
ধুলায় বসে তোমার তরে
কাঁদব না আর একলা ঘরে,
তোমার লাগি ঘরে-পরে
মানব না আর লাজ।
তোমার তরবারি আমায়
সাজিয়ে দিল আজ-
আমি করব না আর সাজ।

গিরিডি
২৬ ভাদ্র ১৩১২