দিনান্ত

একাত্তরটি প্রদীপ-শিখা
নিবল আয়ুর দেয়ালিতে,
শমের সময় হল কবি
এবার পালা-শেষের গীতে।
গুণ টেনে তোর বয়েস চলে,
পায়ে পায়ে এগিয়ে আনে
তরঙ্গহীন কূল-হারানো
মানস-সরোবরের পানে।
অরূপ-কমল-বনে সেথায়
স্তব্ধবাণীর বীণাপাণি-
এত দিনের প্রাণের বাঁশি
চরণে তাঁর দাও রে আনি।
ছন্দে কভু পতন ছিল,
সুখে স্খলন ক্ষণে ক্ষণে,
সেই অপরাধ করুণ হাতে
ধৌত হবে বিস্মরণে।
দৈবে যে গান গ্লানিবিহীন
ফুলের মতো উঠল ফুটে
আপন ব’লে নেবেন তাহাই
প্রসন্ন তাঁর স্মৃতিপুটে।

অসীম নীরবতার মাঝে
সার্থক তোর বাণী যত
অন্ধকারের বেদীর তলায়
রইল সন্ধ্যাতারার মতো।
যৌবন তোর হয় নি ক্লান্ত
এই জীবনের কুঞ্জবনে-
আজ যদি তার পাপড়িগুলি
খসে শীতের সমীরণে।
দিনান্তে সে শান্তিভরা
ফলের মতো উঠুক ফলি,
অতন্দ্রিত নিশীথিনীর
হবে চরম পূজাঞ্জলি।

১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪০