দুর্দিনে

দুর্যোগ আসি টানে যবে ফাঁসি
কর্মে জড়ায় গ্রন্থি,
মন্থর দিন পাথেয়বিহীন
দীর্ঘ পথের পন্থী;
নির্দয়তম নিন্দার হাস,
নির্মমতম দৈব,
শূন্যে শূন্যে হতাশ বাতাস
ফুকারে “নৈব নৈব”-
হঠাৎ তখন কহে মোরে মন,
“মিথ্যে, এ-সব মিথ্যে,
প্রাণে যদি রয় গান অক্ষয়
সুর যদি রয় চিত্তে।”

চৌদিক করে যুদ্ধঘোষণ,
দুর্গম হয় পন্থা,
চিন্তায় করে রক্ত শোষণ
প্রখর-নখরদন্তা,
নিরানন্দের ঘিরি রহে ঘের,
নাই জীবনের সঙ্গী,
দৈন্য কুরূপ করে বিদ্রূপ
ব্যঙ্গের মুখভঙ্গি-
মন বলে, “নাই ভাবনা কিছুই
মিথ্যে, এ-সব মিথ্যে,
অন্তর-মাঝে চিরধনী তুই
অন্তবিহীন বিত্তে।”

ভাষাহীন দিন কুয়াশাবিলীন-
মলিন উষার স্বর্ণ,
কল্পনা যত বাদুড়ের মতো
রাতে ওড়ে কালো বর্ণ;
আবর্জনার অচলপুঞ্জে
যাত্রার পথ রুদ্ধ,
রিক্তকুসুম শুষ্ক কুঞ্জে
বৈশাখ রহে ক্রুদ্ধ-
মন মোরে কয়, “এ কিছুই নয়,
মিথ্যে, এ সব মিথ্যে,
আপনায় ভুলে গাও প্রাণ খুলে,
নাচো নিখিলের নৃত্যে।”

বন্ধদুয়ার বিশ্ব বিরাজে,
নিবেছে ঘরের দীপ্তি,
চির-উপবাসী আপনার মাঝে
আপনি না পাই তৃপ্তি,
পদে পদে রয় সংশয় ভয়,
পদে পদে প্রেম ক্ষুণ্ন,
বৃথা আহ্বান, বৃথা অনুনয়,
সখার আসন শূন্য-
মন বলি উঠে, “ডুবে যা গভীরে,
মিথ্যে, এ সব মিথ্যে,
নিবিড় ধেয়ানে নিখিল লভি রে
আপনারি একাকিত্বে।”

আবা-মারু, বঙ্গসাগর
২৬ অক্টোবর, ১৯২৭