এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েচি সাঁতার গো

এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো,
এই দু’দিনের নদী হব পার গো।
তা’র পরে যেই ফুরিয়ে যাবে বেলা,
ভাসিয়ে দেব ভেলা,
তা’র পরে তা’র খবর কী যে ধারি নে তার ধার গো,
তা’র পরে সে কেমন আলো, কেমন অন্ধকার গো।

আমি যে অজানার যাত্রী সেই আমার আনন্দ।
সেই তো বাধায় সেই তো মেটায় দ্বন্দ্ব।
জানা আমায় যেমনি আপন ফাঁদে শক্ত ক’রে বাঁধে
অজানা সে সামনে এসে হঠাৎ লাগায় ধন্দ,
এক-নিমেষে যায় গো ফেঁসে অমনি সকল বন্ধ।

অজানা মোর হালের মাঝি, অজানাই ত মুক্তি
তার সনে মোর চিরকালের চুক্তি।
ভয় দেখিয়ে ভাঙায় আমার ভয়
প্রেমিক সে নির্দ্দয়।
মানে না সে বুদ্ধিসুদ্ধি বৃদ্ধ-জনার যুক্তি,
মুক্তারে সে মুক্ত করে ভেঙে তাহার শুক্তি।

ভাবিস্ ব’সে যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরবে।
সেই কূলে কি এই তরী আর ভিড়বে।
ফিরবে না রে, ফিরবে না আর, ফিরবে না,
সেই কূলে আর ভিড়বে না।
সামনেকে তুই ভয় করেছিস, পিছন তোরে ঘিরবে
এমনি কি তুই ভাগ্যহারা? ছিঁড়বে বাঁধন ছিঁড়বে!

ঘণ্টা যে ওই বাজল কবি, হোক্ রে সভাভঙ্গ!
জোয়ার-জলে উঠেছে তরঙ্গ!
এখনো সে দেখায় নি তা’র মুখ,
তাই তো দোলে বুক!
কোন্ রূপে যে সেই অজানার কোথায় পাব সঙ্গ,
কোন্ সাগরের কোন্ কূলে গো কোন্ নবীনের রঙ্গ!

পদ্মাতীরে
২৬শে মাঘ, ১৩২১