জানালায়

বেলা হয়ে গেল, তোমার জানালা- ‘পরে
রৌদ্র পড়েছে বেঁকে।
এলোমেলো হাওয়া আমলকি-ডালে-ডালে
দোলা দেয় থেকে থেকে।
মন্থর পায়ে চলেছে মহিষগুলি,
রাঙা পথ হতে রহি রহি ওড়ে ধূলি,
নানা পাখিদের মিশ্রিত কাকলিতে,
আকাশ আবিল ম্লান সোনালির শীতে।
পসারী হোথায় হাঁক দিয়ে যায়
গলি বেয়ে কোন্‌ দূরে,
ভুলে গেছি যাহা তারি ধ্বনি বাজে
বক্ষে করুণ সুরে।
চোখে পড়ে খনে খনে
তব জানালায় কম্পিত ছায়া
খেলিছে রৌদ্র-সনে।

কেন মনে হয়, যেন দূর ইতিহাসে
কোনো বিদেশের কবি
বিদেশী ভাষার ছন্দে দিয়েছে এঁকে
এ বাতায়নের ছবি।
ঘরের ভিতরে যে-প্রাণের ধারা চলে
সে যেন অতীত কাহিনীর কথা বলে।
ছায়া দিয়ে ঢাকা সুখদুঃখের মাঝে
গুঞ্জনসুরে সুরশৃঙ্গার বাজে।
যারা আসে যায় তাদের ছায়ায়
প্রবাসের ব্যথা কাঁপে,
আমার চক্ষু তন্দ্রা-অলস
মধ্যদিনের তাপে।
ঘাসের উপরে একা বসে থাকি,
দেখি চেয়ে দূর থেকে-
শীতের বেলায় রৌদ্র তোমার
জানালায় পড়ে বেঁকে।

উদীচী, শান্তিনিকেতন
১৫ জানুয়ারি, ১৯৪০