ঝড়

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ে,
ঝড় এল রে আজ-
মেঘের ডাকে ডাক মিলিয়ে
বাজ্‌ রে মৃদঙ বাজ।
আজকে তোরা কী গাবি গান,
কোন্‌ রাগিণীর সুরে!
কালো আকাশ নীল ছায়াতে
দিল যে বুক পূরে।

বৃষ্টিধারায় ঝাপসা মাঠে
ডাকছে ধেনুদল,
তালের তলে শিউরে উঠে
বাঁধের কালো জল।
পোড়ো বাড়ির ভাঙা ভিতে
ওঠে হাওয়ার হাঁক,
শূন্য খেতের ও পার যেন
এ পারকে দেয় ডাক।

আমাকে আজ কে খুঁজেছে
পথের থেকে চেয়ে!
জলের বিন্দু পড়ছে রে তার
অলক বেয়ে বেয়ে।
মল্লারেতে মীড় মিলায়ে
বাজে আমার প্রাণ,
দুয়ার হতে কে ফিরেছে
না গেয়ে তার গান!

আয় গো তোরা ঘরেতে আয়,
বোস্‌ গো তোরা কাছে-
আজ যে আমার সমস্ত মন
আসন মেলে আছে।
জলে স্থলে শূন্যে হাওয়ায়
ছুটেছে আজ কী ও!
ঝড়ের ‘পরে পরান আমার
উড়ায় উত্তরীয়।

আসবি তোরা কারা কারা
বৃষ্টিধারার স্রোতে
কোন্‌ সে পাগল পারাবারের
কোন্‌ পরপার হতে!
আসবি তোরা ভিজে বনের
কান্না নিয়ে সাথে-
আসবি তোরা গন্ধরাজের
গাঁথন নিয়ে হাতে।

ওরে, আজি বহু দূরের
বহু দিনের পানে
পাঁজর টুটে বেদনা মোর
ছুটেছে কোনখানে-
ফুরিয়ে যাওয়ার ছায়াবনে,
ভুলে-যাওয়ার দেশে,
সকল-গড়া সকল-ভাঙা
সকল গানের শেষে!

কাজল মেঘে ঘনিয়ে ওঠে
সজল ব্যাকুলতা,
এলোমেলো হাওয়ায় ওড়ে
এলোমেলো কথা।
দুলছে দূরে বনের শাখা,
বৃষ্টি পড়ে বেগে-
মেঘের ডাকে কোন অশান্ত
উঠিস জেগে জেগে!

কলিকাতা
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৩