যোগী

পশ্চিমে ডুবেছে ইন্দু, সম্মুখে উদার সিন্ধু
শিরোপরি অনন্ত আকাশ,
লম্বমান জটাজুটে, যোগীবর করপুটে
দেখিছেন সূর্য্যের প্রকাশ।
উলঙ্গ সুদীর্ঘকায়, বিশাল ললাট ভায়
মুখে তার শাস্তির বিকাশ,
শূন্যে আঁখি চেয়ে আছে, উদার বুকের কাছে
খেলা করে সমুদ্র বাতাস।
চৌদিকে দিগন্ত মুক্ত, বিশ্বচরাচর সুপ্ত,
তারি মাঝে যোগী মহাকায়,
ভয়ে ভয়ে ঢেউগুলি, নিয়ে যায় পদধূলি,
ধীরে আসে ধীরে চলে যায়।
মহা স্তব্ধ সব ঠাঁই, বিশ্বে আর শব্দ নাই
কেবল সিন্ধুর মহাতান,
যেন সিন্ধু ভক্তিভরে, জলদগম্ভীর স্বরে
তপনের করে স্তবগান।
আজি সমুদ্রের কূলে, নীরবে সমুদ্র দুলে
হৃদয়ের অতল গভীরে,
অনন্ত সে পারবার, ডুবাইছে চারিধার,
ঢেউ লাগে জগতের তীরে।
যোগী যেন চিত্রে লিখা, উঠিছে রবির শিখা
মুখে তারি পড়িছে কিরণ,
পশ্চাতে ব্যাপিয়া দিশি, তামসী তাপসী নিশি
ধ্যান করে মুদিয়া নয়ন।
শিবের জটার পরে যথা সুরধুনী ঝরে
তারা চূর্ণ রজতের স্রোতে,
তেমনি কিরণ লুটে সন্ন্যাসীর জটাজুটে
পূরব-আকাশ-সীমা হতে।
বিমল আলোক হেন, ব্ৰহ্মলোক হ’তে যেন
ঝরে তাঁর ললাটের কাছে,
মর্ত্ত্যের তামসী নিশি, পশ্চাতে যেতেছে মিশি
নীরবে নিস্তব্ধ চেয়ে আছে।
সুদূর সমুদ্র নীরে, অসীম আঁধার তীরে
একটুকু কনকের রেখা,
কি মহা রহস্যময়, সমুদ্রে অরুণোদয়
আভাসের মত যায় দেখা।
চরাচর ব্যগ্র প্রাণে, পূরবের পথ পানে
নেহারিছে সমুদ্র অতল,
দেখ চেয়ে মরি মরি, কিরণ-মৃণাল পরি
জ্যোতির্ময় কনক কমল।
দেখ চেয়ে দেখ পূবে কিরণে গিয়েছে ডুবে
গগনের উদার ললাট,
সহসা সে ঋষিবর আকাশে তুলিয়া কর
গাহিয়া উঠিল বেদ পাঠ।