কৈশোরিকা

হে কৈশোরের প্রিয়া,
ভোরবেলাকার আলোক-আঁধার-লাগা
চলেছিলে তুমি আধ্ঘুমো-আধ্জাগা
মোর জীবনের ঘন বনপথ দিয়া।
ছায়ায় ছায়ায় আমি ফিরিতাম একা,
দেখি দেখি করি শুধু হয়েছিল দেখা
চকিত পায়ের চলার ইশারাখানি।
চুলের গন্ধে ফুলের গন্ধে মিলে
পিছে পিছে তব বাতাসে চিহ্ন দিলে
বাসনার রেখা টানি।

প্রভাত উঠিল ফুটি।
অরুণরাঙিমা দিগন্তে গেল ঘুচে,
শিশিরের কণা কুঁড়ি হতে গেল মুছে,
গাহিল কুঞ্জে কপোতকপোতী দুটি।
ছায়াবীথি হতে বাহিরে আসিলে ধীরে
ভরা জোয়ারের উচ্ছল নদীতীরে-
প্রাণকল্লোলে মুখর পল্লিবাটে।

তুমি ভেসে চল সাথে।
চিররূপখানি নবরূপে আসে প্রাণে;
নানা পরশের মাধুরীর মাঝখানে
তোমারি সে হাত মিলেছে আমার হাতে।
গোপন গভীর রহস্যে অবিরত
ঋতুতে ঋতুতে সুরের ফসল কত
ফলায়ে তুলেছ বিস্মিত মোর গীতে।
শুকতারা তব কয়েছিল যে কথারে
সন্ধ্যার আলো সোনায় গলায় তারে
সকরুণ পুরবীতে।

চিনি, নাহি চিনি তবু।
প্রতি দিবসের সংসার-মাঝে তুমি
স্পর্শ করিয়া আছ যে মর্তভূমি
তার আবরণ খসে পড়ে যদি কভু,
তখন তোমার মুরতি দীপ্তিমতী
প্রকাশ করিবে আপন অমরাবতী
সকল কালের বিরহের মহাকাশে।
তাহারি বেদনা কত কীর্তির স্তূপে
উচ্ছিত হয়ে ওঠে অসংখ্য রূপে
পুরুষের ইতিহাসে।

হে কৈশোরের প্রিয়া,
এ জনমে তুমি নব জীবনের দ্বারে
কোন্ পার হতে এনে দিলে মোর পারে
অনাদি যুগের চিরমানবীর হিয়া।
দেশের কালের অতীত যে মহাদূর,
তোমার কণ্ঠে শুনেছি তাহারি সুর-
বাক্য সেথায় নত হয় পরাভবে।
অসীমের দূতী, ভরে এনেছিলে ডালা
পরাতে আমারে নন্দনফুলমালা
অপূর্ব গৌরবে।

৯ মাঘ, ১৩৪০