কোকিল

আজ বিকালে কোকিল ডাকে,
শুনে মনে লাগে
বাংলাদেশে ছিলেম যেন
তিন-শো বছর আগে।
সে দিনের সে স্নিগ্ধ গভীর
গ্রামপথের মায়া
আমার চোখে ফেলেছে আজ
অশ্রুজলের ছায়া।

পল্লীখানি প্রাণে ভরা,
গোলায় ভরা ধান,
ঘাটে শুনি নারীর কণ্ঠে
হাসির কলতান।
সন্ধ্যাবেলায় ছাদের ‘পরে
দখিন-হাওয়া বহে,
তারার আলোয় কারা ব’সে
পুরাণ-কথা কহে।

ফুলবাগানের বেড়া হতে
হেনার গন্ধ ভাসে,
কদমশাখার আড়াল থেকে
চাঁদটি উঠে আসে।
বধূ তখন বিনিয়ে খোঁপা
চোখে কাজল আঁকে,
মাঝে মাঝে বকুল-বনে
কোকিল কোথা ডাকে।

তিন-শো বছর কোথায় গেল,
তবু বুঝি নাকো
আজো কেন, ওরে কোকিল,
তেমনি সুরেই ডাকো।
ঘাটের সিঁড়ি ভেঙে গেছে,
ফেটেছে সেই ছাদ-
রূপকথা আজ কাহার মুখে
শুনবে সাঁঝের চাঁদ?

শহর থেকে ঘণ্টা বাজে,
সময় নাই রে হায়-
ঘর্ঘরিয়া চলেছি আজ
কিসের ব্যর্থতায়।
আর কি বধূ, গাঁথ মালা,
চোখে কাজল আঁক’?
পুরানো সেই দিনের সুরে
কোকিল কেন ডাক’?

বোলপুর
২৯ বৈশাখ [১৩১৩]