মাঝি

আমার যেতে ইচ্ছে করে
নদীটির ওই পারে-
যেথায় ধারে ধারে
বাঁশের খোঁটায় ডিঙি নৌকো
বাঁধা সারে সারে।
কৃষাণেরা পার হয়ে যায়
লাঙল কাঁধে ফেলে;
জাল টেনে নেয় জেলে,
গোরু মহিষ সাঁতরে নিয়ে
যায় রাখালের ছেলে।

সন্ধ্যে হলে যেখান থেকে
সবাই ফেরে ঘরে;
শুধু রাতদুপরে
শেয়ালগুলো ডেকে ওঠে
ঝাউ-ডাঙাটার ‘পরে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।

শুনেছি ওর ভিতর দিকে
আছে জলার মতো।
বর্ষা হলে গত
ঝাঁকে ঝাঁকে আসে সেথায়
চখাচখী যত।

তারি ধারে ঘন হয়ে
জন্মেছে সব শর;
মানিকজোড়ের ঘর,
কাদাখোঁচা পায়ের চিহ্ন
আঁকে পাঁকের ‘পর।

সন্ধ্যা হলে কত দিন মা,
দাঁড়িয়ে ছাদের কোণে
দেখেছি এক মনে-
চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়ে
সাদা কাশের বনে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।

এ-পার ও-পার দুই পারেতেই
যাব নৌকো বেয়ে।
যত ছেলেমেয়ে
স্নানের ঘাটে থেকে আমায়
দেখবে চেয়ে চেয়ে।

সূর্য যখন উঠবে মাথায়
অনেক বেলা হলে-
আসব তখন চলে
“বড়ো খিদে পেয়েছে গো
খেতে দাও মা” ব’লে।

আবার আমি আসব ফিরে
আঁধার হলে সাঁঝে
তোমার ঘরের মাঝে।
বাবার মতো যাব না মা,
বিদেশে কোন্ কাজে।
মা, যদি হও রাজি,
বড়ো হলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি।।