মেঘমালা

আসে অবগুণ্ঠিতা প্রভাতের অরুণ দুকূলে
শৈলতটমূলে,
আত্মদান অর্ঘ্য আনে পায়।
তপস্বীর ধ্যানে ভেঙে যায়,
গিরিরাজ কঠোরতা যায় ভুলি,
চরণের প্রান্ত হতে বক্ষে লয় তুলি
সজল তরুণ মেঘমালা।
কল্যাণে ভরিয়া উঠে মিলনের পালা।
অচলে চঞ্চলে লীলা,
সুকঠিন শিলা
মত্ত হয় রসে।
উদার দাক্ষিণ্য তার বিগলিত নির্ঝরে বরষে,
গায় কলোচ্ছল গান।
সে দাক্ষিণ্য গোপনের দান
এ মেঘমালারই।
এ বর্ষণ তারই
পর্বতের বাণী হয়ে উঠে জেগে-
নৃত্যবন্যাবেগে
বাধাবিঘ্ন চূর্ণ ক’রে
তরঙ্গের নৃত্যসাথে যুক্ত হয় অনন্ত সাগরে।
নির্মমের তপস্যা টুটিয়া
চলিল ছুটিয়া
দেশে দেশে প্রাণের প্রবাহ,
জয়ের উৎসাহ-
শ্যামলের মঙ্গল-উৎসবে
আকাশে বাজিল বীণা অনাহত রবে।
লঘুসুকুমার স্পর্শ ধীরে ধীরে
রুদ্রসন্ন্যাসীর স্তব্ধ নিরুদ্ধ শক্তিরে
দিল ছাড়া; সৌন্দর্যের বীর্যবলে
স্বর্গেরে করিয়া জয় মুক্ত করি দিল ধরাতলে।

শান্তিনিকেতন
৫ অগস্ট, ১৯৩৫