মেঘমুক্ত

ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে,
আয় গো আয়!
কাঁচা বরাদখানি পড়েছে বনের
ভিজে পাতায়।
ঝিকিঝিকি করি কাঁপিতেছে বট,
ওগো, ঘাটে আয়, নিয়ে আয় ঘট,
পথের দু ধারে শাখে শাখে আজি
পাখিরা গায়।
ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে,
আয় গো আয়।।

তোমাদের সেই ছায়াঘেরা দিঘি
না আছে তল,
কূলে কূলে তার ছেপে ছেপে আজি
উঠেছে জল।
এ ঘাট হইতে ও ঘাটে তাহার
কথা-বলাবলি নাহি চলে আর,
একাকার হল তীরে আর নীরে
তাল-তলায়।
আজ ভোর হতে নাই গো বাদল,
আয় গো আয়।।

ঘাটে পঁইঠায় বসিবি বিরলে
ডুবায়ে গলা,
হবে পুরাতন প্রাণের কথাটি
নূতন বলা।
সে কথার সাথে রেখে রেখে মিল
থেকে থেকে ডেকে উঠিবে কোকিল,
কানাকানি করে ভেসে যাবে মেঘ
আকাশ-গায়।
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল,
আয় গো আয়।।

তপন-আতপে আতপ্ত হয়ে
উঠেছে বেলা,
খঞ্জন দুটি আলস্যভরে
ছেড়েছে খেলা।
কলস পাকড়ি আঁকড়িয়া বুকে
ভরা জলে তোরা ভেসে যাবি সুখে,
তিমিরনিবিড় ঘনঘোর ঘুমে।
স্বপনপ্রায়।
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল,
আয় গো আয়।।

মেঘ ছুটে গেল, নাই গো বাদল,
আয় গো আয়।
আজিকে সকালে শিথিল কোমল
বহিছে বায়।
পতঙ্গ যেন ছবিসম আঁকা
শৈবাল-‘পরে মেলে আছে পাখা,
জলের কিনারে বসে আছে বক
গাছের ছায়!
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল,
আয় গো আয়।।

শিলাইদহ
২১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৭