মুক্তরূপ

তোমারে আপন কোণে স্তব্ধ করি যবে
পূর্ণরূপে দেখিনা তোমায়,
মোর রক্ততরঙ্গের মত্ত কলরবে।
বাণী তব মিশে ভেসে যায়।
তোমার পাখারে আমি রুদ্ধ করি বুঝি,
সে-বন্ধনে তোমাবেই পাই না তো খুঁজি’,
তুমি তো ছায়ার নহ, প্রভাত-বিলাসী,
আলোতেই তোমার প্রকাশ,
তোমার ডানার ছন্দে তব উচ্চ হাসি
যাক্ চ’লে ভেদিয়া আকাশ।।

জানি, যদি লুব্ধ মনে কৃপণতা করি,
ঐশ্বৰ্য্যেও দৈন্য না ঘুচায়,
ব্যর্থ ভাণ্ডারের তবে রহিব প্রহরী,
বঞ্চনা করিব আপনায়।
আত্মা যেথা লুপ্ত থাকে সেথা উপচ্ছায়া
মুগ্ধ চেতনার ‘পরে রচে তা’র মায়া,
তাই নিয়ে ভুলাবে কি আমার জীবন?
গাঁথিব কি বুদ্বুদের হার?
তোমারে আড়াল ক’রে তোমার স্বপন
মিটাবে কি আকাঙ্ক্ষা আমার?

বিরাজে মানব-শৌর্য্যে সূর্য্যের মহিমা,
মর্ত্ত্যে সে তিমির-জয়ী প্রভু,
অজেয় আত্মার রশ্মি, তা’রে দিবে সীমা
প্রেমের সে ধর্ম্ম নহে কভু।
যাও চলি রণক্ষেত্রে, লও শঙ্খ তুলি’,
পশ্চাতে উডুক্ তব রথচক্রধূলি,
নির্দয় সংগ্রাম অন্তে মৃত্যু যদি আসি’
দেয় ভালে অমৃতের টীকা
জানি যেন সে-তিলকে উঠিল প্রকাশি’
আমারো জীবন-জয়-লিখা।।
আমার প্রাণের শক্তি প্রাণে তব লহো;
মোর দুঃখ-যজ্ঞের শিখায়
জ্বলিবে মশাল তব, আতঙ্ক-দুঃসহ।
রাত্রিরে দহি’ সে যেন যায়।
তোমারে করিনু দান শ্রদ্ধার পাথেয়,
যাত্রা তব ধন্য হোক্, যাহা কিছু হেয়
ধূলিতলে হোক্ ধূলি, দ্বিধা যাক্ মরি’,
চরিতার্থ হোক্ ব্যর্থতাও,
তোমার বিজয়মাল্য হ’তে ছিন্ন করি’
আমারে একটি পুষ্প দাও।।

১৩ ভাদ্র, ১৩৩৫