মূল্য প্রাপ্তি

(অবদানশতক)

অঘ্রানে শীতের রাতে নিষ্ঠুর শিশিরঘাতে
পদ্মগুলি গিয়াছে মরিয়া।
সুদাস মালীর ঘরে কাননের সরোবরে
একটি ফুটেছে কী করিয়া।
তুলি ল’য়ে, বেচিবারে গেল সে প্রাসাদদ্বারে
মাগিল রাজার দরশন,-
হেনকালে হেরি ফুল আনন্দে পুলকাকুল
পথিক কহিল একজনঃ-
অকালের পদ্ম তব আমি এটি কিনি লব
কত মূল্য লইবে ইহার।
বুদ্ধ ভগবান আজ এসেছেন পুরমাঝ
তাঁর পায়ে দিব উপহার।
মালী কহে এক মাষা স্বর্ণ পাব মনে আশা-
পথিক চাহিল তাহা দিতে,-
হেনকালে সমারোহে বহু পূজা অর্ঘ্য ব’হে
নৃপতি বাহিরে আচম্বিতে।
রাজেন্দ্র প্রসেনজিত উচ্চারি মঙ্গলগীত
চলেছেন বুদ্ধ দরশনে-

হেরি অকালের ফুল- শুধালেন, কত মূল।
কিনি দিব প্রভুর চরণে।
মালি কহে, হে রাজন্ স্বর্ণ মাষা দিয়ে পণ
কিনিছেন এই মহাশয়।
দশ মাষা দিব আমি- কহিলা ধরণীস্বামী,
বিশ মাষা দিব, পান্থ কয়।
দোঁহে কহে, দেহ, দেহ, হার নাহি মানে কেহ,
মূল্য বেড়ে ওঠে ক্রমাগত।
মালী ভাবে যাঁর তরে এ দোঁহে বিবাদ করে
তাঁরে দিলে আরো পাব কত।
কহিল সে করজোড়ে দয়া ক’রে ক্ষমো মোর-
এ ফুল বেচিতে নাহি মন।
এত বলি ছুটিল সে যেথা রয়েছেন ব’সে
বুদ্ধদেব উজলি কানন।
বসেছেন পদ্মাসনে প্রসন্ন প্রশান্তমনে,
নিরঞ্জন আনন্দ মুরতি।
দৃষ্টি হতে শান্তি ঝরে স্ফুরিছে অধরপরে
করুণার সুধাহাস্যজ্যোতি।
সুদাস রহিল চাহি,- নয়নে নিমেষ নাহি
মুখে তার বাক্য নাহি সরে।
সহসা ভূতলে পড়ি পদ্মটি রাখিল ধরি
প্রভুর চরণপদ্মপরে।

বরষি অমৃতরাশি বুদ্ধ শুধালেন হাসি
কহ বৎস কী তব প্রার্থনা।
ব্যাকুল সুদাস কহে- প্রভু আর কিছু নহে
চরণের ধূলি এককণা।

২৬শে আশ্বিন, ১৩০৬