নমস্কার

প্রভু,
সৃষ্টিতে তব আনন্দ আছে
মমত্ব নাই তবু,
ভাঙায় গড়ায় সমান তোমার লীলা।
তব নির্ঝরধারা
যে বারতা বহি সাগরের পানে
চলেছে আত্মহারা
প্রতিবাদ তারি করিছে তোমার শিলা।
দোঁহার এ দুই বাণী,
ওগো উদাসীন, আপনার মনে
সমান নিতেছ মানি-
সকল বিরোধ তাই তো তোমায়
চরমে হারায় বাণী।

বর্তমানের ছবি
দেখি যবে, দেখি, নাচে তার বুকে
ভৈরব ভৈরবী।
তুমি কী দেখিছ তুমিই তা জানো
নিত্যকালের কবি-
কোন্ কালিমায় সমুদ্রকূলে
উদয়াচলের রবি।
যুঝিছে মন্দ ভালো।
তোমার অসীম দৃষ্টিক্ষেত্রে
কালো সে রয় না কালো।

অঙ্গার সে তো তোমার চক্ষে
ছদ্মবেশের আলো।
দুঃখ লজ্জা ভয়
ব্যাপিয়া চলেছে উগ্র যাতনা
মানববিশ্বময়;
সেই বেদনায় লভিছে জন্ম
বীরের বিপুল জয়।
হে কঠোর, তুমি সম্মান দাও,
দাও না তো প্রশ্রয়।

তপ্ত পাত্র ভরি
প্রসাদ তোমার রুদ্র জ্বালায়
দিয়েছ অগ্রসরি-
যে আছে দীপ্ত তেজের পিপাসু
নিক তাহা পান করি।

নিঠুর পীড়নে যাঁর
তন্দ্রাবিহীন কঠিন দণ্ডে
মথিছে অন্ধকার,
তুলিছ আলোড়ি অমৃতজ্যোতি,
তাঁহারে নমস্কার।

শান্তিনিকেতন
৩ অগস্ট, ১৯৩৫