অদেয়

তোমায় যখন সাজিয়ে দিলেম দেহ,
করেছ সন্দেহ
সত্য আমার দিই নি তাহার সাথে।
তাই কেবলি বাজে আমার দিনে রাতে
সেই সুতীব্র ব্যথা-
এমন দৈন্য, এমন কৃপণতা,
যৌবন-ঐশ্বর্যে আমার এমন অসম্মান!
সে লাঞ্ছনা নিয়ে আমি পাই নে কোথাও স্থান
এই বসন্তে ফুলের নিমন্ত্রণে।
ধেয়ান-মগ্ন ক্ষণে
নৃত্যহারা শান্ত নদী সুপ্ত তটের অরণ্যচ্ছায়ায়
অবসন্ন পল্লীচেতনায়
মেশায় যখন স্বপ্নে-বলা মৃদু ভাষার ধারা-
প্রথম রাতের তারা
অবাক চেয়ে থাকে,
অন্ধকারের পারে যেন কানাকানির মানুষ পেল কাকে,
হৃদয় তখন বিশ্বলোকের অনন্ত নিভৃতে
দোসর নিয়ে চায় যে প্রবেশিতে,
কে দেয় দুয়ার রুধে,
একলা ঘরের স্তব্ধ কোণে থাকি নয়ন মুদে।
কী সংশয়ে কেন তুমি এলে কাঙাল বেশে।
সময় হলে রাজার মতো এসে
জানিয়ে কেন দাও নি আমায় প্রবল তোমার দাবি।
ভেঙে যদি ফেলতে ঘরের চাবি-
ধুলার ‘পরে মাথা আমার দিতেম লুটায়ে,
গর্ব আমার অর্ঘ্য হত পায়ে।
দুঃখের সংঘাতে আজি সুধার পাত্র উঠেছে এই ভ’রে,
তোমার পানে উদ্দেশেতে ঊর্ধ্বে আছি ধ’রে
চরম আত্মদান।
তোমার অভিমান
আঁধার ক’রে আছে আমার সমস্ত জগৎ,
পাই নে খুঁজে সার্থকতার পথ।

কালিম্পঙ
১৮ জুন, ১৯৩৮