অগো আমার ভোরের চড়ুই পাখি

ওগো আমার ভোরের চড়ুই পাখি,
একটুখানি আঁধার থাকতে বাকি
ঘুমঘোরের অল্প অবশেষে,
শাসির পরে ঠোকর মারো এসে,
দেখো কোনো খবর আছে নাকি।
তাহার পরে কেবল মিছিমিছি
যেমন খুশি নাচের সঙ্গে
যেমন খুশি কেবল কিচিমিচি;
নির্ভীক ঐ পুচ্ছ।
সকল বাধা শাসন করে তুচ্ছ।
যখন প্রাতে দোয়েলরা দেয় শিস
কবির কাছে পায় তারা বকশিশ,
সার প্রহর একটানা এক পঞ্চম সুর সাধি
লুকিয়ে কোকিল করে কী ওস্তাদি,
সকল পাখি ঠেলে
কালিদাসের বাহবা সেই পেলে।
তুমি কেয়ার করো না তার কিছু,
মানো নাকো স্বরগ্রামের কোনো উঁচু নিচু।
কালিদাসের ঘরের মধ্যে ঢুকে
ছন্দভাঙা চেঁচামেচি
বাধাও কী কৌতুকে।
নবরত্ন-সভায় কবি যখন করে গান
তুমি তারি থামের মাথায় কী করো সন্ধান।
কবিপ্রিয়ার তুমি প্রতিবেশী,
সারা মুখর প্রহর ধ’রে তোমার মেশামেশি।
বসন্তেরি বায়না-করা
নয়তো তোমার নাট্য,
যেমন-তেমন নাচন তোমার,
নাইকো পারিপাট্য।
অরণ্যেরি গাহন-সভায় যাও না সেলাম ঠুকি’,
আলোর সঙ্গে গ্রাম্য ভাষায় আলাপ মুখোমুখি;
কী যে তাহার মানে
নাইকো অভিধানে,
স্পন্দিত ওই বক্ষটুকু তাহার অর্থ জানে।
ডাইনে বাঁয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে কী করো মস্করা,
অকারণে সমস্ত দিন কিসের এত ত্বরা।
মাটির পরে টান,
ধুলায় করো স্নান,
এমনি তোমার অযত্নেরি সজ্জা,
মলিনতা লাগে না তায় দেয় না তারে লজ্জা।
বাসা বাঁধো রাজার ঘরের ছাদের কোণে
লুকোচুরি নাইকো তোমার মনে।

অনিদ্রাতে যখন আমার কাটে দুখের রাত
আশা করি দ্বারে তোমার প্রথম চঞ্চুঘাত।
অভীক তোমার চটুল তোমার
সহজ প্রাণের বাণী
দাও আমারে আনি,
সকল জীবের দিনের আলো
আমারে লয় ডাকি,
ওগো আমার ভোরের চড়ুই পাখি।।

জোড়াসাঁকো
১১ নভেম্বর, ১৯৪০
প্রাতে