অপর পক্ষ

সময় একটুও নেই।
লাল মখমলের জুতোটা গেল কোথায়;
বেরোল খাটের নীচে থেকে।
গলার বোতাম লাগাতে লাগাতে গেছি চৌকাঠ পর্যন্ত,
হঠাৎ এলেন বাবা।
আলাপ শুরু করলেন ধীরে সুস্থে;
খবর পেয়েছেন দুজন পাত্রের, মিনির জন্যে।
তাঁর মনটা একবার এর দিকে ঝুঁকছে একবার ওর দিকে।
ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি আর উঠছি ঘেমে।

রাস্তায় বেরোলেম;
হাওড়ায় গাড়ি আসতে বারো মিনিট।
বুকের মধ্যে রক্তবেগ মন্দগতি সময়কে মারছে ঠেলা।
ট্যাক্সি ছুটল বে-আইনি চালে।
হ্যারিসন রোড, চিৎপুর রোড,
হাওড়া ব্রিজ, ন’ মিনিট বাকি।
দুর্ভাগ্য আর গোরুর গাড়ি আসে যখন
আসে ভিড় ক’রে।
রাস্তাটা পিণ্ডি পাকিয়ে গেছে পাট-বোঝাই গাড়িতে।
হাঁক ডাক আর ধাক্কা লাগালে কনিস্টেবল;
নিরেট আপদ ফাঁক দেয় না কোথাও।
নেমে পড়লুম ট্যাক্সি ছেড়ে,
হন্হনিয়ে চললুম পায়ে হেঁটে।
পৌঁছলুম হাওড়া স্টেশনে।
কী জানি কব্জিঘড়িটা ফাস্ট্ হয় যদি পনেরো মিনিট।
কী জানি, আজ থেকে টাইম্টেবিলের
সময় যদি পিছিয়ে থাকে।
ঢুকে পড়লুম ভিতরে।
দাঁড়িয়ে আছে একটা খালি ট্রেন-
যেন আদিকালের প্রকাণ্ড সরীসৃপটার কঙ্কাল,
যেন একঘেয়ে অর্থের গ্রন্থিতে বাঁধা
অমরকোষের একটা লম্বা শব্দাবলী।
নির্বোধের মতো এলেম উঁকি মেরে মেয়ে-গাড়িগুলোতে।
ডাকলেম নাম ধ’রে,
“কী জানি” ছাড়া আর-কোনো কারণ নেই
সেই পাগলামির।
ভগ্ন আশা শূন্য প্লাট্ফরম্ জুড়ে ভূলুণ্ঠিত।

বেরিয়ে এলুম বাইরে-
জানি নে যাই কোন্ দিকে।
বাসের নীচে চাপা পড়ি নি নিতান্ত দৈবক্রমে।
এই দয়াটুকুর জন্যে ইচ্ছে নেই
দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে।