অপ্রকাশ

মুক্ত হও হে সুন্দরী!-
ছিন্ন করো রঙিন কুয়াশা।
অবনত দৃষ্টির আবেশ,
এই অবরুদ্ধ ভাষা,
এই অবগুণ্ঠিত প্রকাশ।
সযত্ন লজ্জার ছায়া
তোমারে বেষ্টন করি জড়ায়েছে অস্পষ্টের মায়া
শতপাকে,
মোহ দিয়ে সৌন্দর্যেরে করেছে আবিল;
অপ্রকাশে হয়েছ অশুচি।
তাই তোমারে নিখিল
রেখেছে সরায়ে কোণে।
ব্যক্ত করিবার দীনতায়
নিজেরে হারালে তুমি,
প্রদোষের জ্যোতিঃক্ষীণতায়
দেখিতে পেলে না আজও আপনারে উদার আলোকে-
বিশ্বেরে দেখ নি, ভীরু, কোনোদিন বাধাহীন চোখে
উচ্চশির করি।

স্বরচিত সংকোচে কাটাও দিন,
আত্ম-অপমানে চিত্ত দীপ্তিহীন, তাই পুণ্যহীন।
বিকশিত স্থলপদ্ম পবিত্র সে, মুক্ত তার হাসি,
পূজায় পেয়েছে স্থান আপনারে সম্পূর্ণ বিকাশি।
ছায়াছন্ন যে লজ্জায় প্রকাশের দীপ্তি ফেলে মুছি,
সত্তার ঘোষণাবাণী স্তব্ধ করে,
জেনো সে অশুচি।
ঊর্ধ্বশাখা বনস্পতি যে ছায়ারে দিয়েছে আশ্রয়
তার সাথে আলোর মিত্রতা,
সমুন্নত সে বিনয়।
মাটিতে লুটিয়ে গুল্ম সর্ব অঙ্গ ছায়াপুঞ্জ করি,
তলে গুপ্ত গহ্বরেতে কীটের নিবাস।

হে সুন্দরী,
মুক্ত করো অসম্মান, তব অপ্রকাশ-আবরণ।
হে বন্দিনী, বন্ধনেরে কোরো না কৃত্রিম আভরণ।
সজ্জিত লজ্জার খাঁচা, সেথায় আত্মার অবসাদ-
অর্ধেক বাধায় সেথা ভোগের বাড়ায়ে দিতে স্বাদ
ভোগীর বাড়াতে গর্ব খর্ব করিয়ো না আপনারে
খণ্ডিত জীবন লয়ে আচ্ছন্ন চিত্তের অন্ধকারে।

৬ মাঘ, ১৩৩৮