পাঁচিলের এধারে

পাঁচিলের এ ধারে
ফুলকাটা চিনের টবে
সাজানো গাছ সুসংযত।
ফুলের কেয়ারিতে
কাঁচি-ছাঁটা বেগ্নি গাছের পাড়।
পাঁচিলের গায়ে গায়ে
বন্দী-করা লতা।
এরা সব হাসে মধুর ক’রে,
উচ্চহাস্য নেই এখানে;
হাওয়ায় করে দোলাদুলি
কিন্তু জায়গা নেই দুরন্ত নাচের-
এরা আভিজাত্যের সুশাসনে বাঁধা।
বাগানটাকে দেখে মনে হয়
মোগল বাদশার জেনেনা,
রাজ-আদরে অলংকৃত,
কিন্তু পাহারা চারদিকে,
চরের দৃষ্টি আছে ব্যবহারের প্রতি।
পাঁচিলের ওপারে দেখা যায়
একটি সুদীর্ঘ য়ুকলিপ্টাস
খাড়া উঠেছে ঊর্ধ্বে।
পাশেই দুটি-তিনটি সোনাঝুরি
প্রচুর পল্লবে প্রগল্ভ।
নীল আকাশ অবারিত বিস্তীর্ণ
ওদের মাথার উপরে।

অনেকদিন দেখেছি অন্যমনে,
আজ হঠাৎ চোখে পড়ল
ওদের সমুন্নত স্বাধীনতা-
দেখলেম, সৌন্দর্যের মর্যাদা
আপন মুক্তিতে।
ওরা ব্রাত্য, আচারমুক্ত, ওরা সহজ;
সংযম আছে ওদের মজ্জার মধ্যে
বাইরে নেই শৃঙ্খলার বাঁধাবাঁধি।
ওদের আছে শাখার দোলন
দীর্ঘ লয়ে;
পল্লবগুচ্ছ নানা খেয়ালের;
মর্মরধ্বনি হাওয়ায় ছড়ানো।

আমার মনে লাগল ওদের ইঙ্গিত;
বললেম, ‘টবের কবিতাকে
রোপণ করব মাটিতে,
ওদের ডালপালা যথেচ্ছ ছড়াতে দেব
বেড়া-ভাঙা ছন্দের অরণ্যে।’