পাঠিকা

বহিছে হাওয়া উতল বেগে,
আকাশ ঢাকা সজল মেঘে,
ধ্বনিয়া উঠে কেকা।
করি নি কাজ, পরি নি বেশ,
গিয়েছে বেলা বাঁধি নি কেশ,
পড়ি তোমারই লেখা।

ওগো আমারই কবি,
তোমারে আমি জানি নে কভু,
তোমার বাণী আঁকিছে তবু
অলস মনে অজানা তব ছবি।
বাদলছায়া হায় গো মরি,
বেদনা দিয়ে তুলেছ ভরি,
নয়ন মম করিছে ছলোছলো।
হিয়ার মাঝে কি কথা তুমি বল!

কোথায় কবে আছিলে জাগি,
বিরহ তব কাহার লাগি,
কোন্ সে তব প্রিয়া!
ইন্দ্র তুমি, তোমার শচী-
জানি তাহারে তুলেছ রচি
আপন মায়া দিয়া।

ওগো আমার কবি,
ছন্দ বুকে যতই বাজে
ততই সে মূরতিমাঝে
জানি না কেন আমারে আমি লভি।
নারীহৃদয়-যমুনাতীরে
চিরদিনের সোহাগিনীরে
চিরকালের শুনাও স্তবগান।
বিনা কারণে দুলিয়া ওঠে প্রাণ।

নাই বা তার শুনিনু নাম,
কভু তাহারে না দেখিলাম,
কিসের ক্ষতি তায়।
প্রিয়ারে তব যে নাহি জানে
জানে সে তারে তোমার গানে
আপন চেতনায়।

ওগো আমার কবি,
সুদূর তব ফাগুন-রাতি
রক্তে মোর উঠিল মাতি,
চিত্তে মোর উঠিছে পল্লবি।
জেনেছ যারে তাহারো মাঝে
অজানা যেই সে-ই বিরাজে,
আমি যে সেই অজানাদের দলে।
তোমার মালা এল আমার গলে।

বৃষ্টিভেজা যে ফুলহার
শ্রাবণসাঁঝে তব প্রিয়ার
বেণীটি ছিল ঘেরি,
গন্ধ তারই স্বপ্নসম
লাগিছে মনে, যেন সে মম
বিগত জনমেরই।

ওগো আমার কবি,
জান না, তুমি মৃদু কী তানে
আমারই এই লতাবিতানে
শুনায়েছিলে করুণ ভৈরবী।
ঘটে নি যাহা আজ কপালে
ঘটেছে যেন সে কোন্ কালে,
আপনভোলা যেন তোমার গীতি
বহিছে তারই গভীর বিস্মৃতি।

শান্তিনিকেতন
বৈশাখ, ১৩৪১