পরিচয়

তখন বর্ষণহীন অপরাহ্ণ মেঘে
শঙ্কা ছিল জেগে;
ক্ষণে ক্ষণে তীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায়
বায়ু হেঁকে যায়;
শূন্যে যেন মেঘচ্ছিন্ন রৌদ্ররাগে পিঙ্গল জটায়
নারদ হানিছে ক্রোধ রক্তচক্ষু কটাক্ষচ্ছটায়।

সে-দুর্য্যোগে এনেছিনু তোমার বৈকালী,
কদম্বের ডালি
বাদলের বিষন্নছায়াতে
গীতহারা প্রাতে
নৈরাশ্যজয়ী সে ফুল রেখেছিলো কাজল প্রহরে
রৌদ্রের স্বপনছবি রোমাঞ্চিত কেশরে কেশরে।।

মন্থর মেঘেরে যবে দিগন্তে ধাওয়ায়
পূবন হওয়ায়,
কাঁদে বন শ্রাবণের রাতে
প্লাবনের ঘাতে,
তখনো নির্ভীক নীপ গন্ধ দিল পাখীর কুলায়ে,
বৃন্ত ছিল ক্লান্তিহীন, তখনো সে পড়ে নি ধূলায়।
সেই ফুলে দৃঢ় প্রত্যাশার
দিনু উপহার।।

সজল সন্ধ্যায় তুমি এনেছিলে, সখী,
একটি কেতকী।
তখনো হয়নি দীপ জ্বালা,
ছিলাম নিরালা।
সারি দেওয়া সুপারির আন্দোলিত সঘন সবুজে
জোনাকি ফিরিতেছিল অবিশ্রান্ত কা’রে খুঁজে খুঁজে’

দাঁড়াইলে দুয়ারের বাহিরে আসিয়া,
গোপনে হাসিয়া।
শুধালেম আমি কৌতূহলী,
“কী এনেছো” বলি’।
পাতায় পাতায় বাজে ক্ষণে ক্ষণে বারিবিন্দুপাত,
গন্ধঘন প্রদোষের অন্ধকারে বাড়াইনু হাত।

ঝঙ্কারি’ উঠিল মোর অঙ্গ আচম্বিতে
কাঁটার সঙ্গীতে।
চমকিনু কী তীব্র হরষে
পরুষ পরশে!
সহজ-সাধন-লব্ধ নহে সে মুগ্ধের নিবেদন,
অন্তরে ঐশ্বর্য্য রাশি, আচ্ছাদনে কঠোর বেদন
নিষেধে নিরুদ্ধ যে-সম্মান
তাই তব দান।।

৪ ভাদ্র, ১৩৩৫