পোড়ো বাড়ি

চারিদিকে কেহ নাই, একা ভাঙা বাড়ি
সন্ধে বেলা ছাদে ব’সে ডাকিতেছে কাক,
নিবিড় আঁধার, মুখ বাড়ায়ে র’য়েছে,
যেথা আছে ভাঙা ভাঙা প্রাচীরের ফাঁক।
পড়েছে সন্ধ্যার ছায়া অশথের গাছে,
থেকে থেকে শাখা তার উঠিছে নড়িয়া,
ভগ্ন শুষ্ক দীর্ঘ এক দেবদারু তরু
হেলিয়া ভিত্তির পরে রয়েছে পড়িয়া।
আকাশেতে উঠিয়াছে আধখানি চাঁদ,
তাকায় চাঁদের পানে গৃহের আঁধার,
প্রাঙ্গণে করিয়া মেলা ঊর্দ্ধমুখ হ’য়ে
চন্দ্রালোকে শৃগালেরা করিছে চীৎকার।

শুধাইরে, ওই তোর ঘোর স্তব্ধ ঘরে
কখন কি হয়েছিল বিবাহ উৎসব?
কোনো রজনীতে কিরে ফুল্ল দীপালোকে
উঠেছিল প্রমোদের নৃত্যগীত রব?
হোথায় কি প্রতিদিন সন্ধ্যা হয়ে এলে
তরুণীর সন্ধ্যাদীপ জ্বালাইয়া দিত?
মায়ের কোলেতে শুয়ে চাঁদেরে দেখিয়া
শিশুটি তুলিয়া হাত ধরিতে চাহিত?

বালকেরা বেড়াত কি কোলাহল করি?
আঙিনায় খেলিত কি কোন ভাই বোন্?
মিলে মিশে স্নেহে প্রেমে আনন্দে উল্লাসে
প্রতি দিবসের কাজ হ’ত সমাপন?
কোন্ ঘরে কে ছিল রে! সে কি মনে আছে?
কোথায় হাসিত বধূ সরমের হাস,
বিরহিণী কোন্ ঘরে কোন্ বাতায়নে
রজনীতে একা বসে ফেলিত নিশ্বাস?
যে দিন শিয়রে তোর অশথের গাছ
নিশীথের বাতাসেতে করে মর মর,
ভাঙা জানালার কাছে পশে অতি ধীরে
জাহ্নবীর তরঙ্গের দূর কলস্বর-
সে রাত্রে কি তাদের আবার পড়ে মনে
সেই সব ছেলেদের সেই কচি মুখ,
কত স্নেহময়ী মাতা তরুণ তরুণী
কত নিমিষের কত ক্ষুদ্র সুখ দুখ?
মনে পড়ে সেই সব হাসি আর গান,
মনে পড়ে- কোথা তা’রা, সব অবসান।