পত্র

অবকাশ ঘোরতর অল্প,
অতএব কবে লিখি গল্প!
সময়টা বিনা কাজে ন্যস্ত,
তা নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত।
তাই ছেড়ে দিতে হল শেষটা
কলমের ব্যবহার-চেষ্টা।
সারাবেলা চেয়ে থাকি শূন্যে,
বুঝি গতজন্মের পুণ্যে
পায় মোর উদাসীন চিত্ত
রূপে রূপে অরূপের বিত্ত।
নাই তার সঞ্চয়তৃষ্ণা,
নষ্ট করাতে তার নিষ্ঠা।
মৌমাছি-স্বভাবটা পায় নাই,
ভবিষ্যতের কোনো দায় নাই।
ভ্রমর যেমন মধু নিচ্ছে
যখন যেমন তার ইচ্ছে।
অকিঞ্চনের মতো কুঞ্জে
নিত্য আলসরস ভুঞ্জে।

মৌচাক রচে না কী জন্যে-
ব্যর্থ বলিয়া তারে অন্যে
গাল দিক, খেদ নাই তা নিয়ে।
জীবনটা চলেছে সে বানিয়ে
আলোতে বাতাসে আর গন্ধে
আপন পাখা-নাড়ার ছন্দে।
জগতের উপকার করতে
চায় না সে প্রাণপণে মরতে,
কিম্বা সে নিজের শ্রীবৃদ্ধির
টিকি দেখিল না আজও সিদ্ধির।
কভু যার পায় নাই তত্ত্ব
তারি গুণগান নিয়ে মত্ত।
যাহা-কিছু হয় নাই পষ্ট,
যা দিয়েছে না-পাওয়ার কষ্ট,
যা রয়েছে অভ্যাসের বস্তু,
তারেই সে বলিয়াছে “অস্তু’
যাহা নহে গণনায় গণ্য
তারি রসে হয়েছে সে ধন্য।
তবে কেন চাও তারে আনতে
পাব্লিশরের চক্রান্তে।
যে রবি চলেছে আজ অস্তে
দেবে সমালোচকের হস্তে?
বসে আছি, প্রলয়ের পথ-কার
কবে করিবেন তার সৎকার।
নিশীথিনী নেবে তারে বাহুতে,
তার আগে খাবে কেন রাহুতে?
কলমটা তবে আজ তোলা থাক্,
স্তুতিনিন্দার দোলে দোলা থাক্।

আজি শুধু ধরণীর স্পর্শ
এনে দিক অন্তিম হর্ষ।
বোবা তরুলতিকার বাক্য
দিক তারে অসীমের সাক্ষ্য।