প্রাণের ডাক

সুদূর আকাশে ওড়ে চিল,
উড়ে ফেরে কাক,
বারে বারে ভোরের কোকিল
ঘন দেয় ডাক।
জলাশয় কোন্ গ্রামপারে,
বক উড়ে যায় তারই ধারে,
ডাকাডাকি করে শালিখেরা।
প্রয়োজন থাক্ নাই থাক্
যে যাহারে খুশি দেয় ডাক,
যেথাসেথা করে চলাফেরা।

উছল প্রাণের চঞ্চলতা
আপনারে নিয়ে।
অস্তিত্বের আনন্দ ও ব্যথা
উঠিছে ফেনিয়ে।
জোয়ার লেগেছে জাগরণে-
কলোল্লাস তাই অকারণে,
মুখরতা তাই দিকে দিকে।
ঘাসে ঘাসে পাতায় পাতায়,
কী মদিরা গোপনে মাতায়,
অধীরা করেছে ধরণীকে।

নিভৃতে পৃথক কোরো নাকো
তুমি আপনারে।
ভাবনার বেড়া বেঁধে রাখো
কেন চারি ধারে।
প্রাণের উল্লাস অহেতুক
রক্ত তব হোক-না উৎসুক,
খুলে রাখো অনিমেষ চোখ;
ফেলো জাল চারি দিক ঘিরে,
যাহা পাও টেনে লও তীরে
ঝিনুক শামুক যাই হোক।

হয়তো বা কোনো কাজ নাই,
ওঠো তবু ওঠো;
বৃথা হোক, তবুও বৃথাই
পথ-পানে ছোটো।
মাটির হৃদয়খানি ব্যেপে
প্রাণের কাঁপন ওঠে কেঁপে,
কেবল পরশ তার লহো।
আজি এই চৈত্রের প্রভাতে
আছ তুমি সকলের সাথে,
এ কথাটি মনে প্রাণে কহো।

জোড়াসাঁকো
৭ এপ্রিল, ১৯৩৪