প্রবাসী

পরবাসী চলে এসো ঘরে
অনুকূল সমীরণভরে।
বারে বারে শুভদিন
ফিরে গেল অর্থহীন,
চেয়ে আছে সবে তোমা-তরে
ফিরে এসো ঘরে।

আকাশে আকাশে আয়োজন,
বাতাসে বাতাসে আমন্ত্রণ।
বন ভরা ফুলে ফুলে,
এসো এসো, লহো তুলে,
উঠে ডাক মর্মরে মর্মরে।

ফসলে ঢাকিয়া যায় মাটি,
তুমি কি লবে না তাহা কাটি।
ওই দেখো কতবার
হল খেয়া পারাপার,
সারিগান উঠিল অম্বরে।

কোথা যাবে সে কি জানা নাই।
যেথা আছ ঘর সেখানেই।
মন যে দিল না সাড়া,
তাই তুমি গৃহছাড়া,
পরবাসী বাহিরে অন্তরে।

আঙিনায় আঁকা আলিপনা,
আঁখি তব চেয়ে দেখিল না।
মিলনঘরের বাতি
জ্বলে অনিমেষভাতি
সারারাতি জানালার ‘পরে।

বাঁশি পড়ে আছে তরুমূলে,
আজ তুমি আছ তারে ভুলে।
কোনোখানে সুর নাই,
আপন ভুবনে তাই
কাছে থেকে আছ দূরান্তরে।

এসো এসো মাটির উৎসবে
দক্ষিণবায়ুর বেণুরবে।
পাখির প্রভাতীগানে,
এসো এসো পুণ্যস্নানে
আলোকের অমৃতনির্ঝরে।

ফিরে এসো তুমি উদাসীন,
ফিরে এসো তুমি দিশাহীন।
প্রিয়েরে বরিতে হবে,
বরমাল্য আনো তবে,
দক্ষিণা দক্ষিণ তব করে।

দুঃখ আছে অপেক্ষিয়া দ্বারে,
বীর তুমি বক্ষে লহো তারে।
পথের কণ্টক দলি
ক্ষতপদে এসো চলি
ঝটিকার মেঘমন্দ্রস্বরে।

বেদনার অর্ঘ্য দিয়ে, তবে
ঘর তব আপনার হবে।
তুফান তুলিবে কূলে,
কাঁটাও ভরিবে ফুলে,
উৎসধারা ঝরিবে প্রস্তরে।

চৈত্র, ১৩৩২