প্রভাত

স্বর্ণ-সুধা-ঢালা এই প্রভাতের বুকে
যাপিলাম সুখে,
পরিপূর্ণ অবকাশ করিলাম পান।
মুদিল অলস পাখা মুগ্ধ মোর গান।
যেন আমি নিস্তব্ধ মৌমাছি
আকাশ-পথের মাঝে একান্ত একেলা ব’সে আছি।
যেন আমি আলোকের নিঃশব্দ নির্ঝরে
মন্থর মুহূর্তগুলি ভাসায়ে দিতেছি লীলাভরে।
ধরণীর বক্ষ ভেদি’ যেথা হ’তে উঠিতেছে ধারা
পুষ্পের ফোয়ারা,
তৃণের লহরী,
সেখানে হৃদয় মোর রাখিয়াছি ধরি’;
ধীরে চিত্ত উঠিতেছে ভরি’

সৌরভের স্রোতে।
ধূলি-উৎস হ’তে
প্রকাশের অক্লান্ত উৎসাহ,
জন্ম-মৃত্যু-তরঙ্গিত রূপের প্রবাহ
স্পন্দিত করিছে মোর বক্ষস্থল আজি।
রক্তে মোর উঠে বাজি’
তরঙ্গের অরণ্যের সম্মিলিত স্বর,
নিখিল মর্ম্মর।
এ বিশ্বের স্পর্শের সাগর
আজ মোর সর্ব্ব অঙ্গ ক’রেছে মগন।
এই স্বচ্ছ উদার গগন
বাজায় অদৃশ্য শঙ্খ শব্দহীন সুর।
আমার নয়নে মনে ঢেলে দেয় সুনীল সুদূর।।

বুয়েনোস্ এয়ারিস্,
১১ নভেম্বর, ১৯২৪।