পুরোনো বট

লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা,
ঘন পাতার গহন ঘটা,
হেথা হোথায় রবির ছটা,
পুকুর ধারে বট।
দশ দিকেতে ছড়িয়ে শাখা,
কঠিন বাহু আঁকাবাঁকা,
স্তব্ধ যেন আছ আঁকা,
শিরে আকাশ পট।
নেবে নেবে গেছে জলে
শিকড় গুলো দলে দলে,
সাপের মত রসাতলে,
আলয় খুঁজে মরে।
শতেক শাখা বাহু তুলি,
বাযুর সাথে কোলাকুলি,
আনন্দেতে দোলাদুলি,
গভীর প্রেমভরে।
ঝড়ের তালে নড়ে মাথা,
কাঁপে লক্ষকোটি পাতা,
আপন মনে গাও গাথা
দুলাও মহাকায়া।
তড়িৎ পাশে উঠে হেসে,
ঝড়ের মেঘ ঝটিৎ এসে
দাড়িয়ে থাকে এলো কেশে,
তলে গভীর ছায়া।
ঝটিকা আসে তোমার কোলে,
তোমার বাহু পরে দোলে,
গান গাহে সে উতরোলে,
ঘুমোলে তবে থামে।
পাতার ফাঁকে তারা ফুটে,
পাতার কোলে বাতাস লুটে,
ডাইনে তব প্রভাত উঠে,
সন্ধ্যা টুটে বামে।
নিশি-দিসি দাঁড়িয়ে আছ
মাথায় লয়ে জট,
ছোট ছেলেটি মনে কি পড়ে
ওগো প্রাচীন বট?
কতই শাখী তোমার শাখে
বসে যে চলে গেছে,
ছোট ছেলেরে তাদেরি মত
ভুলে কি যেতে আছে?
তোমার মাঝে হৃদয় তারি
বেঁধে ছিল যে নীড়।
(তোমার) ডালেপালায় সাধগুলি তার
কত করেছে ভিড়।
মনে কি নেই সারাটা দিন
বসিয়ে বাতায়নে,
তোমার পানে রইত চেয়ে
অবাক দুনয়নে?
তোমার তলে মধুর ছায়া
তোমার তলে ছুটি,
তোমার তলে নাচ্ত বসে
শালিখ পাখী দুটি।
ভাঙ্গা ঘাটে নাইত কারা
তুল্ত কারা জল,
পুকুরেতে ছায়া তোমার
কর্ত টলমল।
জলের উপর রোদ প’ড়েছে
সোণামাখা মায়া,
ভেসে বেড়ায় দুটি হাঁস
দুটি হাঁসের ছায়া।
ছোট ছেলে রইত চেয়ে
বাসন অগাধ,
মনের মধ্যে খেলাত তার
কত খেলার সাধ।
(যদি) বাযুর মত খেল্তে পেত
তোমার চারি ভিতে,
(যদি) ছায়ার মত শুতে পেত
তোমার ছায়াটিতে,
(যদি) পাখীর মতো উড়ে যেত
উড়ে আস্ত ফিরে,
(যদি) হাঁসের মতো ভেসে যেত
তোমার তীরে তীরে।
নাইছে যারা তাদের মত
নাইতে যেত যদি,
জল আন্তে যেত পথে।
কোথায় গঙ্গা নদী!
খেল্ত ফেসব ছেলেগুলি
ডাক্ত যদি তারে।
তাদের সাথে খেল্ত সুখে
তাদের দ্বারে দ্বারে।

মনে হ’ত তোমার ছায়ে
কতই কিযে আছে,
কাদের যেন ঘুম পাড়াতে
ঘুঘু ডাক্ত গাছে।
মনে হ’ত তোমার মাঝে
কাদের কেন ঘর।
আমি যদি তাদের হতেম!
কেন হলেম পর?
(তারা) ছায়ার মত ছায়ায় থাকে
পাতার ঝর ঝরে,
গুনগুনিয়ে সবাই মিলে
কতই যে গান করে।
দূরে বাজে মূলতান
পড়ে আসে বেলা,
(তারা) ঘাসে বসে দেখে জলে
আলো ছায়ার খেলা।
সন্ধ্যে হলে চুল বাঁধে
তাদের মেয়েগুলি,
ছেলেরা সব দোলায় বসে
খেলায় দুলি দুলি।
গহিন খাতে দখিন বাতে
চাঁদের আলোর শুভ্রতনু-
ঝিমি ঝিমি গীত।
ওখানেতে পাঠশালা নেই,
পণ্ডিত মশাই,
বেত হাতে নাই বসে
মাধব গোঁসাই।
সারাটা দিন ছুটি কেবল,
সারাটা দিন খেলা,
পুকুর ধারে আঁধার-করা
বট গাছের তলা।

আজকে কেন নাই তারা?
আছে আর সকলে,
তারা তাদের বাসা ভেঙ্গে
কোথায় গেছে চলে।
ছায়ার মধ্যে মায়া ছিল
ভেঙ্গে দিল কে?
ছায়া কেবল রৈল পড়ে,
কোথায় গেল সে?
ডালে বসে পাখীরা আজ
কোন্ প্রাণেতে ডাকে?
রবির আলো কাদের খোঁজে
পাতার ফাঁকে ফাঁকে?
গল্প কত ছিল যেন
তোমার খোপে খাপে,
পাখীর সঙ্গে মিলে মিশে
ছিল চুপেচাপে,-
দুপুর বেলা নূপুর তাদের
বাজ্ত অনুক্ষণ,
(শুনে) ছোট দুটি ভাই ভগিনীর
আকুল হ’ত মন।
ছেলে বেলায় ছিল তারা,
কোথায় গেল শেষে!
গেছে বুঝি ঘুমপাড়ানি
মাসি পিসির দেশে!