রাত্রিরূপিণী

হে রাত্রিরূপিণী,
আলো জ্বালো একবার ভালো করে চিনি।
দিন যার ক্লান্ত হল তারই লাগি কী এনেছ বর,
জানাক তা তব মৃদু স্বর।
তোমার নিশ্বাসে
ভাবনা ভরিল মোর সৌরভ-আভাসে।
বুঝিব বক্ষের কাছে
ঢাকা আছে
রজনীগন্ধার ডালি!
বুঝিবা এনেছ জ্বালি
প্রসন্ন ললাটনেত্রে সন্ধ্যার সঙ্গিনীহীন তারা-
গোপন আলোক তারি, ওগো বাক্যহারা,
পড়েছ তোমার মৌন- ‘পরে-
এনেছ গভীর হাসি করুণ অধরে
বিষাদের মতো শান্ত স্থির।
দিবসে সুতীব্র আলো, বিক্ষিপ্ত সমীর,
নিরন্তর আন্দোলন,
অনুক্ষণ
দ্বন্দ্ব-আলোড়িত কোলাহল।

তুমি এসো অচঞ্চল,
এসো স্নিগ্ধ আবির্ভাব,
তোমারই অঞ্চলতলে লুপ্ত হোক যত ক্ষতি লাভ।
তোমার স্তব্ধতাখানি
দাও টানি
অধীর উদ্ভ্রান্ত মনে।
যে অনাদি নিঃশব্দতা সৃষ্টির প্রাঙ্গণে
বহ্নিদীপ্ত উদ্দমের মত্ততায় জ্বর
শান্ত করি করে তারে সংযত সুন্দর,
সে গম্ভীর শান্তি আনো তব আলিঙ্গনে
ক্ষুব্ধ এ জীবনে।
তব প্রেমে
চিত্তে মোর যাক থেমে
অন্তহীন প্রয়াসের লক্ষ্যহীন চাঞ্চল্যের মোহ,
দুরাশার দুরন্ত বিদ্রোহ।
সপ্তর্ষির তপোবনে হোমহুতাশন হতে
আনো তব দীপ্ত শিখা। তাহারই আলোতে
নির্জনের উৎসব-আলোক
পুণ্য হবে, সেইক্ষণে আমাদের শুভদৃষ্টি হোক।
অপ্রমত্ত মিলনের মন্ত্র সুগম্ভীর
মন্দ্রিত করুক আজি রজনীর তিমিরমন্দির।

৭ মাঘ, ১৩৩৮