রবিবারী সংস্করণ

আজ হল রবিবার- খুব মোটা বহরের
কগজের এডিশন; যত আছে শহরের
কানাকানি, যত আছে আজগবি সংবাদ,
যায় নিকো কোনোটার একটুও রঙ বাদ।
‘বার্তাকু’ লিখে দিল, ‘গুজরানওয়ালায়
দলে দলে জোট করে পাঞ্জাবি গোয়ালায়।
বলে তারা, গোরু পোষা গ্রাম্য এ কারবার
প্রগতির যুগ আজ দিন এল ছাড়বার।
আজ থেকে প্রত্যহ রাত্তির পোয়ালেই
বসবে প্রেপরিটরি ক্লাস এই গোয়ালেই।
স্তূপ রচা দুই বেলা খড়ভুষি-ঘাসটার
ছেড়ে দিয়ে হবে ওরা ইস্কুল-মাস্টার।
হম্বাধ্বনি যাহা গো-শিশু গো-বৃদ্ধের
অন্তর্ভূত হবে বই-গেলা বিদ্যের।
যত অভ্যেস আছে লেজ ম’লে পিটোনো
ছেলেদের পিঠে হবে পেট ভ’রে মিটোনো।’
‘গদাধরে’ রেগে লেখে- ‘এ কেমন ঠাট্টা,
বার্তাকু পরে পরে সাতটা কি আটটা
যা লিখেছে সব ক’টা সমাজের বিরোধী,
মতগুলো প্রগতির দ্বার আছে নিরোধি।
সেদিন সে লিখেছিল, ঘুঁটে চাই চালানো,
শহরের ঘরে ঘরে ঘুঁটে হোক জ্বালানো।
কয়লা ঘুঁটেতে যেন সাপে আর নেউলে,
ঝড়িয়াকে করে দিক একদম দেউলে।
সেনেট হাউস আদি বড়ো বড়ো দেয়ালী
শহরের বুক জুরে আছে যেন হেঁয়ালি।
ঘুঁটে দিয়ে ভরা হোক, এই এক ফতোয়ায়
এক দিনে শহরের বেড়ে যাবে কত আয়।
গোয়ালারা চোনা যদি জমা করে গামলায়
কত টাকা বাঁচে তবে জল-দেওয়া মামলায়।
বার্তাকু কাগজের ব্যঙ্গে যে গা জ্বলে,
সুন্দর মুখ পেলে লেপে ওরা কাজলে।
এ-সকল বিদ্রূপে বুদ্ধি যে খেলো হয়,
এ দেশের আবহাওয়া ভারি এলোমেলো হয়।’
গদাধর কাগজের ধমকানি থামল,
হেসে উঠে বার্তাকু যুদ্ধেতে নামল।
বলে, ‘ভায়া, এ জগতে ঠাট্টা সে ঠাট্টাই-
গদাধর, গদা রেখে লও সেই পাঠটাই।
মাস্টার না হয়ে যে হলে তুমি এডিটর
এ লাগি তোমার কাছে দেশটাই ক্রেডিটর।
এডুকেশনের পথে হয় নি যে মতি তব,
এই পুণ্যেই হবে গোকুলেই গতি তব।’

অবশেষে এ দুখানা কাগজের আসরে
বচসার ঝাঁজ দেখে ভয়ে কথা না সরে।

উদয়ন
১৭ মার্চ ১৯৪০