রূপকার

ওরা কি কিছু বোঝে
যাহারা আনাগোনার পথে
ফেরে কত কী খোঁজে?
হেলায় ওরা দেখিয়া যায় এসে বাহির দ্বারে;
জীবনপ্রতিমারে
জীবন দিয়ে গড়িছে গুণী, স্বপন দিয়ে নহে।
ওরা তো কথা কহে,
সে-সব কথা মূল্যবান জানি,
তবু সে নহে বাণী।

রাতের পরে কেটেছ দুখরাত,
দিনের পরে দিন,
দারুণ তাপে করেছে তনু ক্ষীণ।
সৃষ্টিকারী বজ্রপাণি যে বিধি নির্মম,
বহ্নিতুলিসম
কল্পনা সে দখিন হাতে যার,
সব-খোয়ানো দীক্ষা তারই নিঠুর সাধনার
নিয়েছে ও যে প্রাণে;
নিজেরে ও কি বাঁচাতে কভু জানে?

হায় রে রূপকার,
নাহয় কারো করো নি উপকার-
আপন দায়ে করেছ তুমি নিজেরে অবসান,
সে লাগি কভু চেয়ো না প্রতিদান।
পাঁজরভাঙা কঠিন বেদনার
অংশ নেবে শকতি হেন, বাসনা হেন কার!
বিধাতা যবে এসেছে দ্বারে গিয়েছে কর হানি,
জাগে নি তবু, শোনে নি ডাক যারা,
সে প্রেম তারা কেমনে দিবে আনি
যে প্রেম সব-হারা-
করুণ চোখে যে প্রেম দেখে ভুল,
সকল ত্রুটি জানে
তবু যে অনুকূল,
শ্রদ্ধা যার তবু না হার মানে।
কখনো যারা দেয় নি হাতে হাত,
মর্মমাঝে করে নি আঁখিপাত,
প্রবল প্রেরণায়
দিল না আপনায়,
তাহারে কয়ে কথা,
ছড়ায় পথে বাধা ও বিফলতা,
করে না ক্ষমা কভু-
তুমি তাদের ক্ষমা করিয়ো তবু।

হায় গো রূপকার,
ভরিয়া দিয়ো জীবন-উপহার।
চুকিয়ে দিয়ো তোমার দেয়,
রিক্ত হাতে চলিয়া যেয়ো,
কোরো না দাবি ফলের অধিকার।
জানিয়ো মনে চিরজীবন সহায়হীন কাজে
একটি সাথি আছেন হিয়ামাঝে;
তাপস তিনি, তিনিও সদা একা,
তাহার কাজ ধ্যানের রূপ বাহিরে মেলে দেখা।

১০ এপ্রিল, ১৯৩৪