সান্ত্বনা

যে বোবা দুঃখের ভার
ওরে দুঃখী, বহিতেছ, তার কোনো নেই প্রতিকার।
সহায় কোথাও নাই, ব্যর্থ প্রার্থনায়
চিত্তদৈন্য শুধু বেড়ে যায়।

ওরে বোবা মাটি,
বক্ষ তোর যায় না তো ফাটি
বহিয়া বিশ্বের বোঝা দুঃখবেদনার
বক্ষে আপনার
বহু যুগ ধরে।
বোবা গাছ ওরে,
সহজে বহিস শিরে বৈশাখের নির্দয় দাহন,-
তুই সর্বসহিষ্ণু বাহন
শ্রাবণের
বিশ্বব্যাপী প্লাবনের।

তাই মনে ভাবি,
যাবে নাবি
সর্ব দুঃখ সন্তাপ নিঃশেষে
উদার মাটির বক্ষোদেশে,
গভীর শীতল
যার স্তব্ধ অন্ধকার তল
কালের মথিত বিষ নিরন্তর নিতেছে সংহরি।
সেই বিলুপ্তির ‘পরে দিবাবিভাবরী
দুলিছে শ্যামল তৃণস্তর
নিঃশব্দ সুন্দর।
শতাব্দীর সব ক্ষতি সব মৃত্যুক্ষত
যেখানে একান্ত অপগত
সেইখানে বনস্পতি প্রশান্ত গম্ভীর
সূর্যোদয়-পানে তোলে শির,
পুষ্প তার পত্রপুটে
শোভা পায় ধরিত্রীর মহিমামুকুটে।

বোবা মাটি, বোবা তরুদল,
ধৈর্যহারা মানুষের বিশ্বের দুঃসহ কোলাহল
স্তব্ধতায় মিলাইছ প্রতি মুহূর্তেই,-
নির্বাক সান্ত্বনা সেই
তোমাদের শান্তরূপে দেখিলাম,
করিনু প্রণাম।
দেখিলাম সব ব্যথা প্রতিক্ষণে লইতেছে জিনি
সুন্দরের ভৈরবী রাগিণী
সর্ব অবসানে
শব্দহীন গানে।

১৫ আষাঢ়, ১৩৩৯