শ্যামলা

হে শ্যামলা, চিত্তের গহনে আছ চুপ,
মুখে তব সুদূরের রূপ
পড়িয়াছে ধরা
সন্ধ্যার আকাশসম সকল-চঞ্চল চিন্তা-হরা।
আঁকা দেখি দৃষ্টিতে তোমার
সমুদ্রের পরপার,
গোধূলিপ্রান্তরপ্রান্তে ঘন কালো রেখাখানি;
অধরে তোমার বীণাপাণি
রেখে দিয়ে বীণা তাঁর
নিশীথের রাগিণীতে দিতেছেন নিঃশব্দ ঝংকার।
অগীত সে সুর
মনে এনে দেয় কোন্ হিমাদ্রীর শিখরে সুদূর
হিমঘন তপস্যায় স্তব্ধলীন
নির্ঝরের ধ্যান বাণীহীন।
জলভারনত মেঘে
তমালবনের ‘পরে আছে লেগে
সকরুণ ছায়া সুগম্ভীর-
তোমার ললাট- ‘পরে সেই মায়া রহিয়াছে স্থির।
ক্লান্ত-অশ্রু রাধিকার বিরহের স্মৃতির গভীরে
স্বপ্নময়ী যে যমুনা বহে ধীরে
শান্তধারা
কলশব্দহারা
তাহারই বিষাদ কেন
অতল গাম্ভীর্য ল’য়ে তোমার মাঝারে হেরি যেন।
শ্রাবণে অপরাজিতা, চেয়ে দেখি তারে
আঁখি ডুবে যায় একেবারে-
ছোটো পত্রপুটে তার নীলিমা করেছে ভরপুর,
দিগন্তের শৈলতটে অরণ্যের সুর
বাজে তাহে, সেই দূর আকাশের বাণী
এনেছে আমার চিত্তে তোমার নির্বাক মুখখানি।

২৯ জুলাই, ১৯৩২