শেষ মধু

বসন্ত বায় সন্ন্যাসী হায়
চৈৎ-ফসলের শূন্য ক্ষেতে-
মৌমাছিদের ডাক দিয়ে যায়
বিদায় নিয়ে যেতে যেতেঃ-
আয়রে, ওরে, মৌমাছি, আয়
চৈত্র-যে যায় পত্র-ঝরা,
গাছের তলায় আঁচল বিছায়
ক্লান্তি-অলস বসুন্ধরা।।

সজ্নে ঝুলায় ফুলের বেণী,
আমের মুকুল সব ঝরেনি,
কুঞ্জবনের প্রান্ত ধারে
আকন্দ রয় আসন পেতে।
আয়রে তোরা মৌমাছি, আয়,
আস্বে কখন শুক্নো খরা,
প্রেতের নাচন নাচ্বে তখন
রিক্ত নিশার শীর্ণ জরা।।

শুনি যেন কানন-শাখায়
বেলা-শেষের বাজায় বেণু।
মাখিয়ে নে আজ পাখায় পাখায়
স্মরণভরা গন্ধরেণু।
কাল যে-কুসুম পড়ে ঝ’রে
তাদের কাছে নিস্গো ভ’রে
ওই বছরের শেষের মধু
– এই বছরের মৌচাকেতে।।

নূতন দিনের মৌমাছি, আয়,
নাইরে দেরী, করিস্ ত্বরা,
শেষের দানে ঐ রে বাজায়
বিদায়-দিনের দানের ভরা।
চৈত্র মাসের হাওয়ায় কাঁপা
দোলন-চাঁপার কুঁড়িখানি
প্রলয়-দাহের রৌদ্র তাপে
বৈশাখে আজ ফুট্বে, জানি।।

যা-কিছু তা’র আছে দেবার
শেষ ক’রে সব নিবি এবার
যাবার বেলায় যাক্ চ’লে যাক্
বিলিয়ে দেবার নেশায় মেতে।
আয়রে ওরে মৌমাছি আয়,
আয়রে গোপন মধুহরা,
চরম দেওয়া সঁপিতে চায়
ঐ মরণের স্বয়ম্বরা।।

চৈত্র, ১৩৩৩