শীত

কেন শীতের হাওয়া হঠাৎ ছুটে এলো
গানের বেলা শেষ না হ’তে হ’তে?
আমার মনের কথা ছড়িয়ে এলোমেলো
ভাসিয়ে দিলো শুক্নো পাতার স্রোতে।
আমার মনের কথা যত
তা’রা উজান তরীর মতো;
পালে যখন হাওয়ার বলে
মরণ-পারে নিয়ে চলে,
চোখের জলের স্রোত যে তাদের টানে
পিছু ঘাটের পানে
যেথায় তুমি, প্রিয়ে,
এক্লা ব’সে আপন মনে
আঁচল মাথায় দিয়ে।।

কেন ঘোরে তা’রা শুক্নো পাতার পাকে,
কাঁপন-ভরা হিমের বায়ুভরে?
কেন ঝরা ফুলের পাপ্ড়ি তা’দের ঢাকে,
লুটায় কেন মরা ঘাসের পরে?
তাদের হ’লো কি দিন সারা?
এখন বিদায় নেবে তা’রা?

এবার বুঝি কুয়াশাতে
লুকিয়ে তা’রা পোউষ রাতে
ধূলার ডাকে সাড়া দিতে চলে
যেথায় ভূমিতলে
এক্লা তুমি, প্রিয়ে,
ব’সে আছো আপন মনে
আঁচল মাথায় দিয়ে?

আমার মন যে বলে, নয় কখনই নয়,
ফুরায়নি তো, ফুরাবার এই ভান;
আমার মন যে বলে, শুনি আকাশময়
যাবার মুখে, ফিরে আসার গান।
আমার ভরা-মনের কথা;
তাদের শীর্ণ শীতের লতা
হিমের রাতে লুকিয়ে রাখে
নগ্ন শাখার ফাঁকে ফাঁকে,
ফাল্গুনেতে ফিরিয়ে দেবে ফুলে
তোমার চরণ মূলে
যেথায় তুমি, প্রিয়ে,
এক্লা ব’সে আপন মনে
আঁচল মাথায় দিয়ে।।

বুয়েনোস্ এয়ারিস্,
১০ নভেম্বর, ১৯২৪।