স্বল্প

জানি আমি, ছোটো আমার ঠাঁই-
তাহার বেশি কিছুই চাহি নাই।
দিয়ো আমায় সবার চেয়ে অল্প তোমার দান,
নিজের হাতে দাও তুলে তো
রইবে অফুরান।

আমি তো নই কাঙাল পরদেশী,
পথে পথে খোঁজ করে যে
যা পায় তারো বেশি।
সকলটুকুই চায় সে পেতে হাতে,
পুরিয়ে নিতে পারে না সে
আপন দানের সাথে।

তুমি শুনে বললে আমায় হেসে,
বললে ভালোবেসে,
‘আশ মিটিবে এইটুকুতেই তবে?’
আমি বলি, তার বেশি কী হবে।
যে-দানে ভার থাকে
বস্তু দিয়ে পথ সে কেবল
আটক করে রাখে।

যে-দান কেবল বাহুর পরশ তব
তারে আমি বীণার মতো বক্ষে তুলে লব।
সুরে সুরে উঠবে বেজে,
যেটুকু সে তাহার চেয়ে
অনেক বেশি সে যে।

লোভীর মতো তোমার দ্বারে
যাহার আসা-যাওয়া
তাহার চাওয়া-পাওয়া
তোমায় নিত্য খর্ব করে আনে
আপন ক্ষুধার পানে।
ভালোবাসার বর্বরতা,
মলিন করে তোমারি সম্মান
পৃথুল তার বিপুল পরিমাণ।

তাই তো বলি, প্রিয়ে,
হাসিমুখে বিদায় কোরো স্বল্প কিছু দিয়ে;
সন্ধ্যা যেমন সন্ধ্যাতারাটিরে
আনিয়া দেয় ধীরে
সূর্য-ডোবার শেষ সোপানের ভিতে
সলজ্জ তার গোপন থালিটিতে।

শান্তিনিকেতন
১৭ জুলাই, ১৯৪০