স্নেহময়ী

হাসিতে ভরিয়ে গেছে হাসি মুখখানি,
প্রভাতে ফুলের বনে দাঁড়ায়ে আপন মনে
মরি মরি, মুখে নাই বাণী।
প্রভাত কিরণগুলি চৌদিকে যেতেছে খুলি
যেন শুভ্র কমলের দল,
আপন মহিমা লয়ে তারি মাঝে দাঁড়াইয়ে
কে তুই, করুণাময়ি বল্।
স্নিগ্ধ ওই দু-নয়ানে চাহিলে মুখের পানে
সুধাময়ী শান্তি প্রাণে জাগে,
শুনি যেন স্নেহবাণী, কোমল ও হাতখানি
প্রাণের গায়েতে যেন লাগে।
তোরে যেন চিনিতাম, তোর কাছে শুনিতাম
কত কি কাহিনী, সন্ধেবেলা,
যেন মনে নাই, কবেকাছে বসি মোরা সবে
তোর কাছে করিতাম খেলা।
অতি ধীরে তোর পাশে প্রভাতের বায়ু আসে,
যেন ছোট ভাইটির প্রায়,
যেন তোর স্নেহ পেয়েতোর মুখ পানে চেয়ে
আবার সে খেলাইতে যায়।
অমিয়-মাধুরী মাখিচেয়ে আছে দুটি আঁখি,
জগতের প্রাণ জুড়াইছে,
ফুলেরা আমোদে মেতে হেলে দুলে বাতাসেতে
আঁখি হতে স্নেহ কুড়াইছে।
কি যেন জান গো ভাষা, কি যেন দিতেছ আশা,
আঁখি দিয়ে পরাণ উথলে,
চারিদিকে ফুলগুলি, কচি কচি বাহু তুলি,
কোলে নাও, কোলে নাও বলে।
কারে যেন কাছে ডাক, যেথা তুমি বসে থাক
তার চারিদিকে থাক তুমি,
তোমার আপনা দিয়ে হাসিময়ী শান্তি দিয়ে,
পূর্ণ কর চরাচরভূমি।
তোমাতে পূরেছে বন, পূর্ণ হল সমীরণ,
তোমাতে পূরেছে লতাপাতা।
ফুল দূরে থেকে চায় তোমার পরশ পায়,
লুটায় তোমার কোলে মাথা।
তোমার প্রাণের বিভা চৌদিকে দুলিছে কিবা
প্রভাতের আলোকহিল্লোলে,
আজিকে প্রভাতে এ কি স্নেহের প্রতিমা দেখি,
ব’সে আছ জগতের কোলে।
কেহ মুখে চেয়ে থাকে, কেহ তোরে কাছে ডাকে,
কে তোর কোলে খেলা করে।
তুমি শুধু স্তব্ধ হয়ে একটি কথা না ক’য়ে
চেয়ে আছ আনন্দের ভরে।
ওই যে তোমার কাছে সকলে দাঁড়িয়ে আছে
ওরা মোর আপনার লোক,
ওরাও আমারি মত তোর স্নেহে আছে রত,
জুঁই বেলা বকুল অশোক।
বড় সাধ যায় তোরে ফুল হয়ে থাকি ঘিরে
কাননে ফুলের সাথে মিশে,
নয়ন কিরণে তোর দুলিবে পরাণ মোর,
সুবাস ছুটিবে দিশে দিশে।
তোমার হাসিটি লয়ে হরষে আকুল হয়ে
খেলা করে প্রভাতের আলো,
হাসিতে আলোটি পড়ে, আলোতে হাসিটি পড়ে,
প্রভাত মধুর হয়ে গেল।
পরশি তোমার কায়, মধুর প্রভাত বায়,
মধুময় কুসুমের বাস,
ওই দৃষ্টি-সুধা দাও, এই দিক পানে চাও,
প্রাণ হোক্ প্রভাত বিকাশ।