সম্পূর্ণ

প্রথম তোমাকে দেখেছি তোমার
বোনের বিয়ের বাসরে
নিমন্ত্রণের আসরে।
সেদিন তখনো দেখেও তোমাকে দেখি নি,
তুমি যেন ছিলে সূক্ষ্মরেখিণী
ছবির মতো-
পেন্সিলে-আঁকা ঝাপসা ধোঁয়াটে লাইনে
চেহারার ঠিক ভিতর দিকের
সন্ধানটুকু পাই নে।
নিজের মনের রঙ মেলাবার বাটিতে
চাঁপালি খড়ির মাটিতে
গোলাপি খড়ির রঙ হয় নি যে গোলা,
সোনালি রঙের মোড়ক হয় নি খোলা।
দিনে দিনে শেষে সময় এসেছে আগিয়ে,
তোমার ছবিতে আমারি মনের
রঙ যে দিয়েছি লাগিয়ে।
বিধাতা তোমাকে সৃষ্টি করতে এসে
আনমনা হয়ে শেষে
কেবল তোমার ছায়া
র’চে দিয়ে, ভুলে ফেলে গিয়েছেন-
শুরু করেন নি কায়া।
যদি শেষ করে দিতেন, হয়তো
হ’ত সে তিলোত্তমা,
একেবারে নিরুপমা।
যত রাজ্যের যত কবি তাকে
ছন্দের ঘের দিয়ে
আপন বুলিটি শিখিয়ে করত
কাব্যের পোষা টিয়ে।
আমার মনের স্বপ্নে তোমাকে
যেমনি দিয়েছি দেহ
অমনি তখন নাগাল পায় না
সাহিত্যিকেরা কেহ।
আমার দৃষ্টি তোমার সৃষ্টি
হয়ে গেল একাকার।
মাঝখান থেকে বিশ্বপতির ঘুচে গেল অধিকার।
তুমি যে কেমন আমিই কেবল জানি,
কোনো সাধারণবাণী
লাগে না কোনোই কাজে।
কেবল তোমার নাম ধ’রে মাঝে-মাঝে
অসময়ে দিই ডাক,
কোনো প্রয়োজন থাক্ বা নাই-বা থাক্।
অমনি তখনি কাঠিতে-জড়ানো উলে
হাত কেঁপে গিয়ে গুন্তিতে যাও ভুলে।
কোনো কথা আর নাই কোনো অভিধানে
যার এত বড়ো মানে।

শ্যামলী, শান্তিনিকেতন
ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯