সমুদ্রে

সকালবেলায় ঘাটে যে দিন
ভাসিয়ে দিলেম নৌকাখানি
কোথায় আমার যেতে হবে
সে কথা কি কিছুই জানি!
শুধু শিকল দিলেম খুলে,
শুধু নিশান দিলেম তুলে,
টানি নি দাঁড়, ধরি নি হাল-
ভেসে গেলেম স্রোতের মুখে।
তীরে তরুর ডালে ডালে
ডাকল পাখি প্রভাত-কালে,
তীরে তরুর ছায়ায় রাখাল
বাজায় বাঁশি মনের সুখে।

তখন আমি ভাবি নাইকো
সূর্য যাবে অস্তাচলে,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
পড়ব এসে সাগর-জলে-
ঘাটে ঘাটে তীরে তীরে
যে তরী ধায় ধীরে ধীরে
বাইতে হবে নিয়ে তারে
নীল পাথারে একলা-প্রাণে।
তারাগুলি আকাশ ছেয়ে
মুখে আমার রইল চেয়ে,
সিন্ধু-শকুন উড়ে গেল
কূলে আপন কুলায়-পানে।

দুলুক তরী ঢেউয়ের ‘পরে
ওরে আমার জাগ্রত প্রাণ।
গাও রে আজি নিশীথ-রাতে
অকূল-পাড়ির আনন্দগান।
যাক-না মুছে তটের রেখা,
নাই-বা কিছু গেল দেখা,
অতল বারি দিক-না সাড়া
বাঁধন-হারা হাওয়ার ডাকে।
দোসর-ছাড়া একার দেশে
একেবারে এক নিমেষে
লও রে বুকে দু হাত মেলি
অন্তবিহীন অজানাকে।

৭ বৈশাখ ১৩১৩