সুন্দর-বনের বাঘ

সুঁদর-বনের কেঁদো বাঘ,
সারা গায়ে চাকা চাকা দাগ।
যথাকালে ভোজনের
কম হ’লে ওজনের
হ’ত তার ঘোরতর রাগ।

এক দিন ডাক দিল গাঁ-গাঁ-
বলে, তোর গিন্নিকে জাগা।
শোন বটুরাম ন্যাড়া,
পাঁচ জোড়া চাই ভেড়া,
এখনি ভোজের পাত লাগা।

বটু বলে, এ কেমন কথা,
শিখেছ কি এই ভদ্রতা।
এত রাতে হাঁকাহাঁকি
ভালো না, জানো না তা কি?
আদবের এ যে অন্যথা।

মোর ঘর নেহাত জঘন্য।
মহাপশু, হেথায় কী জন্য!
ঘরেতে বাঘিনী মাসি
পথ চেয়ে উপবাসী,
তুমি খেলে মুখে দেবে অন্ন।
সেথা আছে গোসাপের ঠ্যাঙ,
আছে তো শুট্কে কোলাব্যাঙ,
আছে বাসি খরগোশ,
গন্ধে পাইবে তোষ।
চলে যাও নেচে ড্যাঙ্, ড্যাঙ্।
নইলে কাগজে প্যারাগ্রাফ
রটিবে, ঘটিবে পরিতাপ-

বাঘ বলে, রামো রামো,
বাক্যবাগীশ থামো,
বকুনির চোটে ধরে হাঁপ।
তুমি ন্যাড়া, আস্ত পাগল।
বেরোও তো, খোলো তো-আগল।
ভালো যদি চাও তবে
আমারে দেখাতে হবে
কোন্ ঘরে পুষেছ ছাগল।

বটু কহে, এ কী অকরণ!
ধরি তব চতুশ্চরণ-
জীববধ মহাপাপ,
তারো বেশি লাগে শাপ
পরধন করিলে হরণ।

বাঘ শুনে বলে, হরি হরি!
না খেয়ে আমিই যদি মরি
জীবেরই নিধন তাহা,
সহমরণেতে আহা
মরিবে যে বাঘী সুন্দরী।
অতএব ছাগলটা চাই,
না হ’লে তুমিই আছ ভাই!
এত বলি তোলে থাবা-

বটুরাম বলে, বাবা!
চলো ছাগলেরই ঘরে যাই।
দ্বার খুলে বলে, পড়ো ঢুকে,
ছাগল চিবিয়ে খাও সুখে।
বাঘ সে ঢুকিল যেই
দ্বিতীয় কথাটি নেই,
বাহিরে শিকল দিল রুখে।

বাঘ বলে, এ তো বোঝা ভার,
তামাসার এ নহে আকার।
পাঁঠার দেখি নে টিকি,
লেজের সিকির সিকি
নেই তো, শুনি নে ভ্যাভ্যাকার।
ওরে হিংসুক সয়তান,
জীবের বধিতে চাস প্রাণ!
ওরে ক্রুর, পেলে তোরে
থাবায় চাপিয়া ধ’রে
রক্ত শুষিয়া করি পান।
ঘরটাও ভীষণ ময়লা-

বটু বলে, মহেশ গয়লা
ও ঘরে থাকিত, আজ
থাকে তোর যমরাজ
আর থাকে পাথুরে কয়লা।

গোঁফ ফুলে ওঠে যেন ঝাঁটা।
বাঘ বলে, গেল কোথা পাঁঠা?
বটুরাম বলে নেচে,
এই পেটে তলিয়েছে,
খুঁজিলে পাবে না সারা গাঁ’টা।