সুপ্রভাত

রুদ্র, তোমার দারুণ দীপ্তি
এসেছে দুয়ার ভেদিয়া;
বক্ষে বেজেছে বিদ্যুৎবাণ
স্বপ্নের জাল ছেদিয়া।
ভাবিতেছিলাম উঠি কি না উঠি,
অন্ধ তামস গেছে কি না ছুটি’,
রুদ্ধ নয়ন মেলি কি না মেলি
তন্দ্রা-জড়িমা মাজিয়া।
এমন সময়ে, ঈশান, তোমার
বিষাণ উঠেছে বাজিয়া
বাজে রে গরজি’ বাজে রে
দগ্ধ মেঘের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
দীপ্ত গগন-মাঝে রে।
চমকি’ জাগিয়া পূর্ব্ব ভুবন
রক্ত বদন লাজে রে।

ভৈরব, তুমি কী বেশে এসেছো,
ললাটে ফুঁসিছে নাগিনী;
রুদ্র-বীণায় এই কি বাজিল
সুপ্রভাতের রাগিণী?
মুগ্ধ কোকিল কই ডাকে ডালে,
কই ফোটে ফুল বনের আড়ালে?
বহুকাল পরে হঠাৎ যেন রে
অমানিশা গেলো ফাটিয়া
তোমার খড়্গ আঁধার মহিষে
দুখানা করিল কাটিয়া।
ব্যথায় ভুবন ভরিছে;
ঝর ঝর করি’ রক্ত-আলোক
গগনে-গগনে ঝরিছে;
কেহ বা জাগিয়া উঠিছে কাঁপিয়া
কেহ বা স্বপনে ডরিছে।

তোমার শ্মশান-কিঙ্কর-দল
দীর্ঘ নিশায় ভূখারী,
শুষ্ক অধর লেহিয়া-লেহিয়া
উঠিছে ফুকারি’-ফুকারি’।
অতিথি তা’রা যে আমাদের ঘরে,
করিছে নৃত্য প্রাঙ্গণ -পরে,
খোলো খোলো দ্বার, ওগো গৃহস্থ,
থেকো না থেকো না লুকায়ে,-
যার যাহা আছে আনো বহি আনো,
সব দিতে হবে চুকায়ে।
ঘুমায়ো না আর কেহ রে।
হৃদয়পিণ্ড ছিন্ন করিয়া
ভাণ্ড ভরিয়া দেহ রে।
ওরে দীন প্রাণ, কী মোহের লাগি’
রেখেছিস মিছে স্নেহ রে।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
“ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই, তা’র ক্ষয় নাই।”
হে রুদ্র, তব সঙ্গীত আমি
কেমনে গাহিব কহি’ দাও স্বামী,
মরণ-নৃত্যে ছন্দ মিলায়ে
হৃদয়-ডমরু বাজাবো।
ভীষণ দুঃখে ডালি ভ’রে ল’য়ে
তোমার অর্ঘ্য সাজাবো।
এসেছে প্রভাত এসেছে।
তিমিরান্তক শিব-শঙ্কর
কী অট্টহাস হেসেছে।
যে জাগিল তা’র চিত্ত আজিকে
ভীম আনন্দে ভেসেছে।

জীবন সঁপিয়া, জীবনেশ্বর,
পেতে হবে তব পরিচয়,
তোমার ডঙ্কা হবে যে বাজাতে
সকল শঙ্কা করি’ জয়।
ভালোই হ’য়েছে ঝঞ্ঝার বায়ে
প্রলয়ের জটা প’ড়েছে ছড়ায়ে,
ভালোই হ’য়েছে প্রভাত এসেছে
মেঘের সিংহবাহনে,-
মিলন-যজ্ঞে অগ্নি জ্বালাবে
বজ্রশিখার দাহনে।
তিমির রাতি পোহায়ে
মহাসম্পদ্ তোমারে লভিব
সব সম্পদ্ খোয়ায়ে,
মৃত্যুরে লবো অমৃত করিয়া
তোমার চরণে ছোঁয়ায়ে।

(প্র-১৩১৬)