ভার

তুমি যত ভার দিয়েছ সে ভার
করিয়া দিয়েছ সোজা,
আমি যত ভার জমিয়ে তুলেছি
সকলি হয়েছে বোঝা।
এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও।
ভারের বেগেতে চলেছি, আমার
এ যাত্রা তুমি থামাও।

যে তোমার ভার বহে কভু তার
সে ভারে ঢাকে না আঁখি,
পথে বাহিরিলে জগৎ তারে তো
দেয় না কিছুই ফাঁকি।
অবারিত আলো ধরে আসি তার হাতে,
বনে পাখি গায়- নদীধারা ধায়-
চলে সে সবার সাথে।

তুমি কাজ দিলে কাজেরই সঙ্গে
দাও যে অসীম ছুটি,
তোমার আদেশ আবরণ হয়ে
আকাশ লয় না লুটি।
বাসনায় মোরা বিশ্বজগৎ ঢাকি,
তোমা-পানে চেয়ে যত করি ভোগ
তত আরো থাকে বাকি।

আপনি যে দুখ ডেকে আনি সে যে
জ্বালায় বজ্রানলে-
অঙ্গার করে রেখে যায়, সেথা
কোনো ফল নাহি ফলে।
তুমি যাহা দাও সে যে দুঃখের দান,
শ্রাবণধারায় বেদনার রসে
সার্থক করে প্রাণ।

যেখানে যা-কিছু পেয়েছি কেবলি
সকলি করেছি জমা-
যে দেখে সে আজ মাগে যে হিসাব,
কেহ নাহি করে ক্ষমা।
এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু, নামাও।
ভারের বেগেতে ঠেলিয়া চলেছে,
এ যাত্রা মোর থামাও।

‘পদ্মা’
২৫ মাঘ [১৩১২]