বরের দর

কন্যাদায়ে বিব্রত হয়েছ বিলক্ষণ;
তাই বুঝে সংক্ষেপে কচ্ছি ফর্দ্দ সমাপন।

নগদে চাই তিনটি হাজার,
তাতেই আবার গিন্নী বেজার,
বলেন, এবার বরের বাজার কসা কি রকম!
(কিন্তু) তোমার কাছে চক্ষুলজ্জা লাগে যে বিষম!

(আর) পড়ার খরচ মাসে তিরিশ,
হয় না কমে, বলে ‘গিরিশ,’
কাজেই সেটা, হ্যাঁ হ্যাঁ, বেশি বলা অকারণ;
সোণার চেন্ ঘড়ী, আইভরি ছড়ি,
ডায়মণ্ডকাটা সোণার বোতাম,
দিও এক সেট্‌, কতই বা দাম?
বিলিতি বুট, ভাল শ্লিপার, বরের প্রয়োজন;
ফুল এষ্টকিং, রেসমী রুমাল, দিও দু’ডজন।

ছাতি, বুরুস, আয়না, চিরুণ,
ফুলকাটা সার্ট, কোট পেণ্টালুন,
দু’ জোড়া শাল, সার্জ্জের চাদর, গরদ সুচিকণ;
জম্‌কালো র‍্যাপার, আতর ল্যাভেণ্ডার,
খান পনের দিশি ধূতি, রেসমী না হয়, দিও সুতি;
হাদ্দ্যাখো ধরিনি ‘চস্‌মা’,- কেমন ভুলো মন!
ছেলে, ঠুসি পেলে খুসি, একটু খাটো-দরশন।

খাট, চৌকী, মশারি, গাদ, এর মধ্যে নেই ‘পারি যদি’
তাকিয়া, তোষক, বালিশাদি, দস্তুর মতন;
হবে দু’ প্রস্ত, শয্যা প্রশস্ত,
(আর) টেবিল, চেয়ার, আল্‌না, ডেক্স,
হাতীর দাঁতের হাত-বাক্স,
ষ্টীল্‌ট্রাঙ্ক খুব বড় দু’টো, যা দেশের চলন,
(আর) তারি সঙ্গে পুরো এক সেট্‌ রূপোরি বাসন।

গিন্নী বলেন বাউটী সুটে, রূপ লাবণ্য ওঠে ফু’টে,
একশ’ ভরি হ’লেই, হবে একটি সেট্‌ উত্তম;
যেন অলঙ্কার দে’খে, নিন্দে ক’রে না লোকে,
দিও বাণারসী বোম্বাই, ফর্দ্দ কিছু হ’ল লম্বাই,
তা, তোমার মেয়ে, তোমার জামাই,
তোমার আকিঞ্চন;
আমার কি ভাই? আজ বাদে কা’ল মুদ্‌ব দুনয়ন!

(আর) দিও যাতায়াতের খরচ,
না হয় কিছু হবে করজ,
তা,- মেয়ের বিয়ে, তোমার গরজ, তোমার প্রয়োজন,
আবার আ’সবে কুলীন-দল, তাদের চাই বিলিতি জল,
ডজন বিশেক ‘হুইস্কি’ রেখো,
নইলে বড় প্রমাদ, দে’খো!
কি ক’র্‌ব ভাই, দেশের আজ কা’ল এমনি চালচলন;
কেবল চক্ষু-লজ্জায়, বাধ’ বাধ’ ঠেকছে যে কেমন!

ছেলেটি মোর নব কাত্তিক,
ভাবটি আবার খাঁটি সাত্ত্বিক,
এই বয়সে ভার ভাত্তিক, কত্তাদের মতন;
যদি দিতেন একটী ‘পাশ’, তবে লাগিয়ে দিতেম ত্রাস,
ফেল্‌ ছেলে, তাই এত কম পণ,
এতেই তোমার উঠ্‌ল কম্পন?
কেবল তোমার বাজার যাচাই- বকালে অকারণ;
দেশের দশা হেরে কান্ত ক’রে অশ্রু বরিষণ!

বাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে ডাকে ঐ পাখী। সুর-মতিয়ার।